প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:১৫
১৯ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আন্দোলন ও সহিংসতা সংঘটিত হয়। ওইদিন রাতে পুলিশের গুলিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। রাজধানীসহ দেশের বড় অংশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে। এই অবস্থা বিবেচনায় রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয় এবং সেনা মোতায়েন করা হয়।
কারফিউর প্রথম দিন সকালেও ঢাকার রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। হাতে গোনা কিছু দোকানপাট খোলা ছিল, এবং যানবাহনের সংখ্যা ছিল সীমিত। এর পরও রামপুরা, যাত্রাবাড়ি, বাড্ডা, শাহজাদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আন্দোলন চলতে থাকে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটে। সারাদিন রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় সেনা সদস্যরা টহল দিচ্ছিলেন।
কারফিউ ঘোষণার রাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গণভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই রাতেই পদ্মায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকারের তিন মন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি পেশ করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠকের পর জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক হলেও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দাবিগুলো নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাদের নিয়ে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করানো হয়, কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীদের হত্যার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। দলটি শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানান, তাদের ৮ দফা দাবি ছিল এবং শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে, তবে তা প্রচার করা হয়নি।
বিশিষ্ট স্থানে যেমন বিটিভি ভবন ও মেট্রোরেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা করা হয়। মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলো সচল হতে বছরখানিক সময় লাগবে বলে ডিএমটিসিএল জানায়। রাতেই কারফিউ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কারফিউর কারণে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিল ও যাত্রী ভোগান্তি বাড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনায় টানা দুই দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এর পাশাপাশি ১৮ জুলাই থেকে দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল যা ২০ জুলাইও বহাল ছিল।
২০ জুলাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ২১ জন নিহত হন, যার মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি-জামায়াত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঢাল করে সহিংসতা ছড়াচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না। আন্দোলনের সমন্বয়করা জানান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
রাজধানীতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয় এবং হেলিকপ্টার টহল চালানো হয়। বিক্ষোভকারীরা সিদ্ধিরগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেয়, সেখানে আটকা পড়া শতাধিক মানুষ উদ্ধার করা হয়।
নাহিদ ইসলামসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা রাতের আঁধারে তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা সফল বলে দাবি করা হলেও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ছিল তাদের দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শাটডাউন অব্যাহত থাকবে।