হার্ট অ্যাটাকে না’ফেরার দেশে চলে গেলেন দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল আলী আশরাফ ওরফে কামরুল হাসান (৪৪)। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিমরাইল গ্রামের মৃত: চান্দ মিয়ার ছেলে আলী আশরাফ ছিলেন দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক। তিনি কুমিল্লার বুড়িচং থানাধীন কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের দেবপুর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহিদুল্লাহ প্রধান বলেন, ‘গতকাল থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। আজ সকালে ডাক্তার দেখাতে দেবীদ্বারের উদ্দেশে রওনা হন। কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যুর সংবাদ পাই।’ তবে ওনার শারেরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের ধারনা দিলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারতাম।
তাকে হাসপাতালে আনা অটোরিকশাচালক আব্দুল হালিম জানান, ‘সকালে আশরাফ স্যার আমাকে ডেকে আনেন। বলেন, বুকে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তিনি ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন,- ‘আমি আসছি, দেবীদ্বার হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে কসবা হাসপাতালে যাব’। দেবীদ্বারের চরবাকর এলাকায় এসে হঠাৎ বুকে হাত দিয়ে বললেন, ‘আমি তোমার কাছে আসতে পারব কিনা জানি না, ওমরকে সঙ্গে নিয়ে এসোৃ’। এরপর আর কোনো কথা বলেননি, লুটিয়ে পড়েন সিএনজিতেই, আমি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মহিম ইবনে সিনা জানান, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। ধারণা করছি হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে।
স্বামীর মৃত্যুর সংবাদে ছুটে এসে হাত-পা গুলিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী রুমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘শেষ ফোনেই বললেন,- বুকে খুব ব্যথা, আর দেখা হবে কিনা জানি না। আমি তো ভাবতেই পারিনি এভাবে চলে যাবে। আমার তিনটা শিশু, আমি এখন কিভাবে বাঁচব?’
১৫ বছরের মেয়ে আফরোজা ইসলাম বাবার লাশের পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে শুধু তাকিয়ে আছে। সে শিমরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ১৩ বছরের ছেলে হাবিবুর রহমান হামিম পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। আর আড়াই বছরের ছোট্ট ওমর বাবার নাম ডেকেই থামছে না।
শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নিহতের মা আয়শা খাতুন। তিনি লাশের পাশে মাথা ঠুকে আর্তনাদ করছেন, ‘আমার মানিক এভাবে চলে গেলি! আমাকে একবারও কিছু বললি না! আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব?’
বুড়িচং থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আমিরুল হক জানান, ‘উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেবীদ্বার থানার ওসি মো. ইয়াছির বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপেক্স থেকে নিহত কনস্টেবলের লাশ বুড়িচং থানায় পাঠানো হয়েছে।’
হঠাৎ চলে যাওয়া এক সৎ-সহজ মানুষের মৃত্যুতে সহকর্মী, পরিবার ও স্থানীয়দের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।