প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ২১:২৫
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হচ্ছে। চুক্তির এই সময়সীমা ঘিরে দুই দেশের মধ্যে নতুন আলোচনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত ইতোমধ্যেই বর্তমান চুক্তির সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং নিজেদের স্বার্থে একটি নতুন কাঠামোর কথা ভাবছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু চুক্তি বাতিলের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গেও পানি বণ্টন চুক্তির শর্তাবলী নতুন করে মূল্যায়নের চিন্তা করছে দিল্লি।
বর্তমান গঙ্গা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ প্রতি বছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত নির্ধারিত হারে পানি পাওয়ার কথা থাকলেও ভারত এখন এই সময়ে আরও অতিরিক্ত পানি দাবি করছে। কৃষি, সেচ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তারা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক বেশি পানি পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। ভারতের যুক্তি, দেশের কৃষি ও শিল্পায়নে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে, আর সেই চাহিদা পূরণে পুরনো চুক্তি যথেষ্ট নয়। তাই চুক্তির পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা তারা তুলে ধরেছে।
১৯৭৫ সালে চালু হওয়া ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত গঙ্গা নদীর পানি হুগলি নদীতে সরিয়ে দিয়ে কলকাতা বন্দরের নৌ চলাচল সচল রাখছে। এই বাঁধ থেকেই পানি নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিবছর বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে, খরার সময় চুক্তির পানি ঠিকভাবে পাওয়া যায় না এবং এতে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ও পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন চুক্তির চিন্তাভাবনায় একমত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের দাবি, বর্তমান চুক্তিতে রাজ্যের পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। ফলে নতুন কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে তারা বাড়তি সুবিধা পেতে চায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি নবায়নের সময় দুই দেশের মধ্যে আন্তরিকতা ও বাস্তবতা উভয়ই গুরুত্ব পাবে। একদিকে বাংলাদেশের ভাটির প্রয়োজনে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, অন্যদিকে ভারতের উজানে বেড়ে যাওয়া পানির চাহিদাও উপেক্ষা করা যাবে না। দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত একটি নতুন চুক্তিই হতে পারে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পানিনীতির মূল চাবিকাঠি।