বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আগামী সাত মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, এই সময়টাই বাংলাদেশকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারে অথবা বিপরীত দিকে ঠেলে দিতে পারে। বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
শফিকুল আলম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়ানোর একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, এবং এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের কাছে শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে, যা বাংলাদেশকে একটি ব্যবসাবান্ধব দেশ হিসেবে তুলে ধরবে। তবে, তিনি একথাও উল্লেখ করেন যে, এই উন্নয়ন কাজটি সফল হওয়ার জন্য বৈশ্বিক বন্দর পরিচালকদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব অপরিহার্য, যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করবে।
অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং তিনি মনে করেন যে, বর্তমান বিশ্বে পুরোনো অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বিলীন হয়ে গেছে। ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল বা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায়, যে অর্থনৈতিক কাঠামো ব্রেটন উডস চুক্তির পর গড়ে উঠেছিল তা এখন আর কার্যকরী নয়। শফিকুল আলম বলেন, ওই যুগে সফল দেশগুলোর মধ্যে ছিল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম। এসব দেশ রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ধীরে ধীরে এই পথে অগ্রসর হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই পিছিয়ে ছিল। এখন মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ সেই অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে তার অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের কি এই মুহূর্তটি কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে?
রাজনীতির প্রসঙ্গেও শফিকুল আলম বলেন, রাজনীতি এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমনকি ইসলামপন্থী দলগুলোও এখন বুঝতে শুরু করেছে যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে তিনি রাজনীতিকে একটি বাধা হিসেবে দেখেন না। তার মতে, প্রধান বাধাটি হবে লজিস্টিকসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, যদি বড় পরিমাণ পণ্য দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পরিবহণের সক্ষমতা না থাকে, তবে বাংলাদেশের উৎপাদনশীল শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ হয়ে যাবে।
অতএব, বাংলাদেশ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সরকার যদি এই সময়টিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তবে দেশের অর্থনীতির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।