বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সোমবার সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন হাজারো মানুষ, যাঁদের উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চারুকলা প্রাঙ্গণজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। রঙ-বেরঙের আলোকসজ্জা, মুখোশ, কাঠের তৈরি শিল্পকর্ম, আর মানুষের প্রাণচাঞ্চল্যে এক ভিন্ন আবহ তৈরি হয়। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই জনস্রোত জমতে শুরু করে চারপাশে, বিশেষ করে রমনা, টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায়।
শোভাযাত্রায় অংশ নেন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী ও নানা পেশার মানুষ। ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষকরাও এ আয়োজনে যুক্ত হন, যা শোভাযাত্রাকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত।
শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ ছিল মুখোশ, পাপেট এবং বাঁশের তৈরি বাঘ, পাখি ও মাছ। এসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের রূপ ও প্রকৃতিনির্ভর মানুষের সংগ্রামের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। এই ভাস্কর্যগুলো শুধু চোখের আনন্দই নয়, সংস্কৃতির গভীর বার্তাও বহন করে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও মানুষ ছুটে এসেছেন এই উৎসব দেখতে। উৎসবের পোশাকে, বিশেষ করে লাল, হলুদ, সবুজ ও কমলার ছোঁয়ায় সেজেছেন নারী-পুরুষ সবাই। নারীদের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন চুড়ি আর শিশুরা ছিল ছোট মুখোশ ও পতাকা হাতে আনন্দে মেতে।
এক দর্শনার্থী জানান, তিনি প্রতি বছর এই শোভাযাত্রার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এটি কেবল উৎসব নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ও জাতিগত ঐক্যের প্রতীক। তিনি মনে করেন, এই আয়োজন নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতিমুখী করে তোলে।
ঢাবির শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন বলেন, “এত মানুষ একত্রে মিলিত হয়ে যে উৎসবের জন্ম দেয়, সেটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ। এই ঐতিহ্যকে এভাবে উদযাপন করতে পারা সত্যিই গর্বের।” তিনি চান, আগামী দিনগুলোতেও এমন আয়োজন অব্যাহত থাকুক।
চারুকলা অনুষদের এই বর্ষবরণ শোভাযাত্রা শুধু রাজধানীর নয়, বরং সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বর্ষবরণের এই আয়োজন আবারও প্রমাণ করেছে—বাংলা নববর্ষ কেবল একটি তারিখ নয়, এটি একটি আবেগ, একটি সংস্কৃতি এবং জাতীয় পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ।