স্থলপথে ভারতীয় সুতা আমদানিতে এনবিআরের নিষেধাজ্ঞা

ভারত থেকে সুতা আমদানির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আর কোনোভাবেই সুতা আমদানি করা যাবে না। এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে এবং পূর্বে জারি করা ২০২৪ সালের ২৭ আগস্টের প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প রক্ষায় নেওয়া এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসন্তোষ। সম্প্রতি ভারত থেকে ডাম্পিং মূল্যে সুতা ও কাপড় দেশে প্রবেশ করে স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে দেশীয় উৎপাদকরা। এর ফলে স্থানীয় শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়, যা বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সরকারকে বারবার জানিয়ে আসছিল।

বিটিএমএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে টেক্সটাইল খাত নানা সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের সংকট, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার, নগদ প্রণোদনার ঘাটতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য মূলধনের তীব্র ঘাটতি।

রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরে বিটিএমএ নেতারা জানান, সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেন, তাহলে দেশীয় টেক্সটাইল খাত একেবারে ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। এতে শুধু শিল্প মালিকরাই নয়, হাজারো শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়বেন।

এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান নতুন নির্দেশনা জারি করেন। তবে স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সমুদ্রপথে সুতা আমদানির ক্ষেত্রে এখনো কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।

সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে দেশীয় উৎপাদকরা। তারা মনে করেন, এতে অন্তত অস্বাভাবিকভাবে কম দামে সুতা আমদানি বন্ধ হবে এবং বাজারে কিছুটা ভারসাম্য ফিরে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্প রক্ষায় তাৎক্ষণিক ফল বয়ে আনলেও দীর্ঘমেয়াদে আরও নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগে উৎসাহ না থাকলে সমস্যা থেকেই যাবে।

তবে সুতা আমদানিতে জটিলতা বাড়লে পোশাক খাতেও প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। ফলে নীতিনির্ধারকদের সামনে রয়েছে ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ।