বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত মানি লন্ডারিং বা অর্থপাচারের সবচেয়ে বড় শিকার। দেশের কিছু প্রভাবশালী গ্রুপ ও পরিবার ব্যাংকিং খাতের সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এসব অর্থ পাচারের পরিমাণ আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং ইস্যু’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন গভর্নর। তিনি জানান, সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপই দেড় লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে কেনা সম্পদ জব্দের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন কেউ অর্থ চুরি বা পাচার করতে না পারে, সে লক্ষ্যে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা অর্থ লুটপাটে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষারোপ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মন্তব্য করেন গভর্নর।
এ সময় গভর্নর আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ইউনিট ঢাকায় হলেও চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিট হিসেবে বিবেচিত। তাই চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকিং খাতের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তা বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রসঙ্গে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনীতির ভারসাম্য ধরে রাখা। বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শেয়ারবাজার ও রিজার্ভও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। ফলে কোনো বড় সংকট এখন আর নেই বলে মনে করেন তিনি। এ সময় তিনি ব্যাংকিং খাতের সমস্যা নিরসনে সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন এবং পরিচালক মো. আনিসুর রহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।