ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষ শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ নামের দুটি প্রতীকী মোটিফ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টিকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা।
চারুকলার সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কালো রঙের টি-শার্ট পরা এবং মুখে মাস্ক থাকা এক যুবক দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে সে এসে আগুন লাগিয়ে চলে যায়। ফুটেজ অনুযায়ী, “৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৪টা ৪৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই সে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকে, আগুন লাগিয়ে আবার বের হয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “যুবকটি গাছপালার পাশে দাঁড়িয়ে অবজার্ভ করে, কুকুরগুলো শান্ত হলে এগিয়ে গিয়ে আগুন দেয়। প্রথমবার আগুন না ধরায় সে আবার ফিরে গিয়ে আগুন দিয়ে নিশ্চিত হয় যে সেটি পুড়বে। এরপর একটানে দেয়াল টপকে ছবির হাটের দিকে চলে যায়।”
এ ঘটনার সময় অনুষদের নিরাপত্তা টিমের সদস্যরা নামাজে বা ওয়াশরুমে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন যুবক একাই কাজটি করেছে এবং আশেপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সে ভালোভাবেই অবগত ছিল বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।
চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরা তদন্ত ছাড়া কিছু বলতে চাই না। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাটি ভোরবেলা ফজরের সময়ের দিকে ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা।” তিনি ঘটনাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বলেন, “এটি এক্সিডেন্টাল নয়, ইনটেনশনালি কেউ ঘটিয়েছে, এটা নিশ্চিত।” শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
চারুকলা অনুষদের বর্ষবরণ শোভাযাত্রায় এবার বড়, মাঝারি ও ছোট মিলিয়ে মোট ৬টি বড় মোটিফ তৈরি করা হচ্ছিল। ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ ছিল সবচেয়ে সামনে, যার মধ্যে নারীর দাঁতাল মুখ ও মাথায় দুটো শিং প্রতীকীভাবে ফ্যাসিবাদকে উপস্থাপন করছিল।