চীনে সফররত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রী লি গোইয়িং এর সাথে এক বৈঠকে বাংলাদেশের নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে ৫০ বছরের একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের অনুরোধ করেছেন। শুক্রবার (২৮ মার্চ) বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউনূস বাংলাদেশের পানির সমস্যা মোকাবিলায় চীনের অভিজ্ঞতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, চীন যে সফলভাবে পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা করেছে, বাংলাদেশও তা থেকে শিখতে চায়।
এ সময় ইউনূস চীনের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে বলেন, "চীনে পানি সমস্যার সমাধান অত্যন্ত সফলভাবে করা হয়েছে। আমরা চাই আপনারা আমাদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিন।" তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ অঞ্চল। আমাদের দেশ শত শত নদীর পানি দ্বারা ঘেরা, কিন্তু কখনো কখনো এই পানি আমাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।"
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, বাংলাদেশের নদীসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর জন্য একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ অপরদিকে নদীর তীরবর্তী ভূমির দখলও বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, "পলি জমার কারণে নদীগুলোর মধ্যে নতুন ভূমি তৈরি হচ্ছে, যা নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে এবং নদী ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।"
এদিকে, চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রী লি গোইয়িং বাংলাদেশের পানির সমস্যা সমাধানে সহায়তার জন্য প্রস্তুত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, "বাংলাদেশও ঠিক আমাদের মতো পানির ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমাদের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছেন, যা আমরা ব্যবহার করছি।"
অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, "আমরা চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চাই এবং তাদের সহায়তায় নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করতে চাই। তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কার করার জন্য চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।"
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে চীনের সহায়তা কামনা করেন এবং বলেন, "আমরা একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে চাই, যা বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনাকে দীর্ঘমেয়াদী সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিণত করবে।"
চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে বসবাস করে। তিনি আশ্বাস দেন, চীন বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।
এ সফরে, অধ্যাপক ইউনূস চীনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে আলোচনা করেছেন, যাতে বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকরী হয় এবং ভবিষ্যতে পানির সংকট মোকাবিলায় উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।