রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় পদ্মা নদীতে একাধিক কাঁটার মেশিন (ড্রেজার) দিয়ে রাত-দিন দফায় দফায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে টোকেনের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি মহল। ক্ষমতার দাপট দেখাতে বালু উত্তোলনের অন্তরালে চলে অস্ত্রের মহরা! অস্ত্রধারী একটি গ্রুপ পাহারা দিয়ে বালু উত্তোলন করে থাকে! দিন-রাত দফায় দফায় পদ্মা নদীর একাধিক জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করলেও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নিরব ভূমিকায় রয়েছে। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
৫ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ও উজানচর এলাকার সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীতে একাধিক কাঁটার মেশিন (ড্রেজার) রয়েছে। পাশে অসংখ্য বাল্কহেড নোঙ্গর করা রয়েছে। কাঁটার মেশিনের সাথে নোঙ্গর করা অবস্থায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছোট-বড় দুই শতাধিক বাল্কহেড অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ফুট বালু বিভিন্ন জেলায় টোকেনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। অপরিচিত কেউ গেলে অস্ত্রধারী এই গ্রুপ স্পীড বোর্ড নিয়ে তাদের ধাওয়া করে থাকেন। যে কারণে কেউ বালু উত্তোলন এলাকায় যাওয়ার সাহস পায় না। গেলেও কেউ ছবি তুলতে পারে না।
এদিকে পদ্মা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর হ্রাস, তীরবর্তী ভূমি ক্ষয় এবং মিঠা পানির মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। এতে স্থানীয় আবাদি জমি বসতবাড়ীর হুমকির মুখে পড়েছে।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে মো. আসলাম প্রামানিক ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চরমহিদাপুর এলাকায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মো. আলম গং এর নেতৃত্বে একাধিক লোড ড্রেজার স্থাপন করিয়া দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
মো. আসলাম প্রামানিক বলেন, দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে প্রতিদিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও নৌ পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। কিন্ত বালু উত্তোলন আজও পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। বাধ্য হয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এভাবে প্রতিনিয়ত পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন হলে নদী ভাঙনের কবলে পড়বে এলাকা। এতে শত শত হেক্টর আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক “এশিয়ান বিল্ডার্স” প্রোঃ আবিদ হাসান বিপ্লব এর নামে হরিরামপুর উপজেলার “লেছড়াগঞ্জ বালু মহল” এক বছরের জন্য ১১ কোটি, ১১লক্ষ, ১১হাজার ১১টাকায় ইজারা দিয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ আয়কর সহ মোট ১৩ কোটি, ৮৮ লক্ষ, ৮৮হাজার ৮শত, ৮০ টাকা। কিন্ত “এশিয়ান বিল্ডার্স” ইজারা আইন উপেক্ষা করে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা চরমহিদাপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২শতাধিক বাল্কহেড বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি বাল্কহেড ৮হাজার ফুট থেকে ১২ হাজার ফুট নিয়ে যাচ্ছে। সেই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০লাখ ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। টোকেনের মাধ্যমে প্রতি ফুট বালু ৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফরিদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার “লেছড়াগঞ্জ বালু মহল” ইজারা নিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ প্রতিনিয়ত নদীতে টহল দিচ্ছেন। তবে রাজবাড়ী অথবা ফরিদপুর জেলার পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরোও বলেন, আমি একাধিকবার মোবাইল ফোনে জানতে পেড়েছি রাজবাড়ী জেলার মধ্যে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্ত সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়নি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান বলেন, বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন সংবাদ শুনেছি। মানিকগঞ্জ-ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে এখনো নির্ধারন করা হয়নি। যেখান থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে সেটা মানিকগঞ্জ-ফরিদপুর নাকি রাজবাড়ী জেলা। তবে আমরা খুব তারাতারি নদীর মধ্যে গিয়ে সীমানা নির্ধারণ করবো।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মিজ সুলতানা আক্তারের কাছে বালু মহালের বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষনিক গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেন যত বড় প্রভাবশালী হোক অবৈধ ভাবে রাজবাড়ী জেলার মধ্যে পদ্মা নদী থেকে এক ফুট বালু উত্তোলন করতে পারবে না। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।