র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে অভিহিত করে সংস্থাটি বিলুপ্তির দাবি তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। মঙ্গলবার প্রকাশিত ৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে র্যাব বিলুপ্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার রোধে এর কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাব বিলুপ্ত করার আগে এ বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা অন্য ইউনিটে গিয়ে একই ধরনের কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা সতর্ক করেছে, কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এছাড়া প্রতিটি সরকারের আমলে র্যাবের দায়মুক্তি এবং অপকর্মের সংস্কৃতি আরও গভীর হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পতিত সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানি, গুম এবং ক্রসফায়ারের মতো অপরাধগুলো এখনো বন্ধ হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা খাতের কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের কারিগরি সহায়তা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে। সংস্কারের জন্য পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
২০০৪ সালে গঠিত র্যাবের বিরুদ্ধে গুম, ক্রসফায়ার এবং হত্যার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। একই বছর ডিসেম্বরে গুম তদন্ত কমিশন র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করে।
এইচআরডব্লিউ আরও জানায়, র্যাবের মতো বাহিনী বিলুপ্ত করে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে, র্যাবের কার্যক্রমের দায়মুক্তির বিষয়টি সরকারগুলো নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
এই দাবির প্রেক্ষিতে মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, দেশের নিরাপত্তা খাতের দীর্ঘস্থায়ী সংস্কার এবং আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করা জরুরি। তবে র্যাব বিলুপ্তি নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও, এইচআরডব্লিউর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং এর সংস্কারের দাবি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপ এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।