দেশ স্বাধীনের পর আওয়ামী লীগের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চারটি স্মারকের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সেক্রেটারিয়েটের নাম ‘মুজিবনগর’, আর আগের দ্বিতীয় রাজধানীর নাম ‘শেরেবাংলা নগর’ রাখা। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালের দৈনিক বাংলায় এতথ্য প্রকাশিত হয়।
এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘জাতীয় পুনর্গঠন সপ্তাহ’-এর ডাক দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজে উপনীত হওয়ার জন্য জাতিকে উদ্দীপনা ও নেতৃত্ব দেওয়া হবে। স্বাধীনতার পর দলটির ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম সভা ছিল এটি।
চারটি স্মারক কী?
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী স্মারক হিসেবে চারটি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো— ১. জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ব্যাপক ইতিহাস রচনার কাজ শুরু করা। ২. জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে প্রথম বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়েছিল— সেখানে একটি উপযুক্ত স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা। ৩. ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই রেসকোর্স ময়দানের নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাখা এবং ৪. বাংলাদেশ সরকারের সেক্রেটারিয়েট ভবনের নাম ‘মুজিবনগর রাখা’ ও আগেকার দ্বিতীয় রাজধানীর (সেকেন্ড ক্যাপিটাল) নাম শেরেবাংলা নগর রাখা।
দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া কী হবে
বাসসের খবরে প্রকাশিত হয়, আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়— শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে শিগগিরই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করা হবে। এ ব্যাপারে এক সাংগঠনিক কমিটি গঠনের ক্ষমতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়া হয়েছে। এই সাংগঠনিক কমিটি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা— এই আদর্শের ওপর ভিত্তি করে ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে। আওয়ামী লীগ গঠনের দায়িত্ব থাকবে এই কমিটির ওপর। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দেশের স্বাধীনতা-উত্তর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। কার্যনির্বাহী কমিটির ৫৪ জন সদস্যের মধ্যে মোট ৫০ জন সদস্য এ বৈঠকে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে মুজিবনগরে কমিটির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ভিকটিম পরিবার পুনর্বাসন
কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে জাতি পুনর্গঠনের কাজে অংশগ্রহণের জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সমগ্র বাংলাদেশে ‘জাতীয় পুনর্গঠন সপ্তাহ’ পালনের সময় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে বলেও জানানো হয়। কমিটির এক প্রস্তাবে বাংলাদেশে গণহত্যা ও নির্যাতন চালানোর জন্য যারা দায়ী— তাদের শাস্তি বিধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কমিটি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার নারীদের ও স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়।
যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি
পাকিস্তানি বাহিনীর দালালদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের বিচার ও শাস্তির সুপারিশ করা হয় কমিটি থেকে। বাংলাদেশে অমানবিক নির্যাতন চালানোর জন্য যারা দায়ী, তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করারও দাবি জানানো হয়।
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই
বাংলাদেশে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরত ছাত্ররা বিনামূল্যে সব পাঠ্য বিষয়ের বই পাবে বলে ওই বছরই সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের একথা জানায়। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এ কর্মসূচির জন্য সরকারের এক কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২৮ হাজার প্রাইমারি স্কুলের ছাত্ররা এতে উপকৃত হবে। সরকার পঞ্চম শ্রেণির ওপরের শ্রেণির ছাত্রদের শতকরা ৪০ ভাগ কমিশনে বই দেবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। এটা ছিল সরকারের গণমুখী শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ।
জাতিসংঘ বাংলাদেশের অস্তিত্ব মানে না
কোনও কোনও মহল প্রকৃত নামে অবহিত না করে বাংলাদেশের অস্তিত্ব অস্বীকারের চেষ্টা করছে। এর প্রমাণ জাতিসংঘ ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এসেও বাংলাদেশকে ‘ঢাকা এরিয়া’ নামে অভিহিত করছে। আইনি পরামর্শের আড়ালে এটা করা হচ্ছে বলে দেশের নেতৃস্থানীয়রা মনে করছিলেন। অথচ ইউনিয়ন (জাতিসংঘ) সদস্যসহ ৪০টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে ততদিনে। বিটিআইএ-এর বরাত দিয়ে বাসস তার রিপোর্টে এ খবর পরিবেশন করেছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মসূচির প্রধান পল মার্ক হেনরীর সাংবাদিক সম্মেলনে জাতিসংঘের এই নীতির ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়। তিনি তার ব্যক্তিগত মত জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয়াদির সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।