২০২৪ সাল জুড়ে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী টেকনাফবাসী আতংকে দিন কাটিয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ, ভারী বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে কাঁপতে হয়েছে সীমান্তের সাধারণ মানুষকে। এ বছর নতুন করে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করেছে। যদিও সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যাটি ৬০ হাজার। সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তা জোরদার থাকার পরও এসব রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দমন-পীড়নের মুখে ৮৭৬ জন সেনা সদস্য ও সীমান্তরক্ষী পালিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কোনো উদ্যোগ এখনো কার্যকর হয়নি। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে রাখাইনের মংডু শহরের সেনাঘাঁটি দখল হওয়ার পর গুলির শব্দ কিছুটা কমে এসেছে, যা সীমান্তবাসীকে সামান্য স্বস্তি দিয়েছে।
টেকনাফ ও উখিয়ায় বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন করে তুলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, শ্রমবাজারে চাপে স্থানীয়দের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এসব সমস্যা সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে।
২০২৪ সালে অপহরণ ও মানবপাচারের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দুষ্কৃতকারীরা দিনে-দুপুরে মানুষ অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করছে। এসব অপহরণের সঙ্গে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা অপরাধী জড়িত। স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিরা তাদের সহযোগিতা করছে। ৩০ ডিসেম্বর টেকনাফ থেকে ২০ জনকে অপহরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশি এবং বাকিরা রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যেকের মুক্তিপণ হিসেবে ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। এদিকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারও থেমে নেই। ২৯ ডিসেম্বর পাহাড়ের তাবুতে আটকে রাখা ৬৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সহিংসতার কারণে এ বছর টেকনাফ থেকে কোনো পর্যটক জাহাজ চলতে পারেনি। পর্যটন নির্ভর ব্যবসা বন্ধ থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। প্রতিবার শীত মৌসুমে দমদমিয়া থেকে সেন্টমার্টিনগামী ৭-৮টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করত, যা এ বছর বন্ধ ছিল।
টেকনাফের মানুষ একদিকে রোহিঙ্গাদের চাপ, অন্যদিকে মিয়ানমারের সহিংসতা, অপহরণ, মানবপাচার, শ্রমবাজার দখল এবং নাফ নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার কারণে আয়ের উৎস হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এসব সংকট সমাধানে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।