জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা ভোটে ২৬ চেয়ারম্যানসহ ১১৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতে ভোটাররা ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং এটি গণতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্য হুমকি। এমন অবস্থা যেন সংসদ নির্বাচনে না হয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান বললেন, অনিয়ম নিয়ে তারা কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তিনি আশা করেন, সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে।
এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৬ চেয়ারম্যানসহ ১১৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৮ জন সাধারণ সদস্য ও ১৯ জন সংরক্ষিত সদস্য। বাকি পদগুলোতে ২ হাজার ২১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ৩৪৮ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের দমননীতি প্রকাশ পাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। এতে ভোটারদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং যারা জয়ী হচ্ছেন তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মুনিরা খান বলেন, যেখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না, সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের কোনো প্রশ্নই আসছে না। অতএব বলা যায়, এই নির্বাচনগুলো অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো না। নির্বাচন হচ্ছে জনগণের আশা, প্রত্যাশার প্রতিফলিত করার জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন একটু ভিন্ন ধর্মী নির্বাচন। সে কারণে এখানে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগটা বেশি। অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে দেশের জন্য তা কলঙ্কজনক হবে। পরিস্থিতি উত্তরণে নির্বাচন কমিশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন তারা।
মুনিরা খান বলেন, ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম এবং শাসন ব্যবস্থায় আমরা যে অধিকার আছে, তা থেকেও আমি বঞ্চিত হলাম। এর দায়-দায়িত্ব আমি নির্বাচন কমিশনকে দেব। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে এবং এটা নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে।
ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, নগদ নারায়ণ, পেশিশক্তি থেকে শুরু করে নানা রকম নিয়ামক নির্বাচনে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো প্রমাণ করা মুশকিল। যেকোনো নাগরিকই চাইবেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু বাস্তবতা নিরিখে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কমিশন। সংসদ নির্বাচনে এ রকম চিত্র হবে না বলে জানান তিনি।
আহসান হাবিব খান বলেন, আসলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো নির্বাচন হওয়া বা প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। কমিশন কখনও এটা আশা করে না। আমরা চাই নির্বাচন উৎসবমুখরভাবে ও প্রতিযোগিতামূলকভাবে হোক। আমরা অবশ্যই এটা বের করার চেষ্টা করব, কেন অন্য কোনো প্রতিনিধি নির্বাচনে আসছে না। শেষ পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করে যাব সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ নির্বাচন করার।
ভোটার, রাজনৈতিকদলসহ সব পক্ষের আস্থা অর্জন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলেও জানান নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।