নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টায় স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ’র উদ্যোগে প্যারীমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের মুক্তির মোড় স্মৃতি ফলকে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। এসময় জাতীয় পাতাকা, ব্যানার ফেষ্টুনসহ শোভাযাত্রায় সংগঠনের কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
এর পর বিকেলে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক চত্বরে এক আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাড. ডিএম আব্দুল বারীর সভাপত্বিতে উপদেষ্টা সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, বিন আলী পিন্টু, কায়েস উদ্দিন, অ্যাড. মুকুল চন্দ্র কবিরাজ, প্রতাপ চন্দ্র সরকার, সুবল চন্দ্র মন্ডল, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদার মুক্ত হয়। এদিন প্রায় দুই হাজার পাকিস্থানি সেনা যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্থান বাহিনীরা ঢাকায় আত্মসমর্পন করার খবর শুনবার পরও নওগাঁয় পাকিস্থান বাহিনীরা অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরদিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ ডিসেম্বর এক শীতের সকালে মুক্তিবাহিনী শহরের জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে আসতেই পাকিস্থানী সেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধে ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিলনা। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারী গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্ত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে।
তৎকালিন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতন কালেক্টরেট (এসডি) অফিস চত্ত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।ছয়জন শহিদরা হলেন: সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের বাঁকাপুর গ্রামের এচাহাস আলী খান, জেলার বদলগাছী উপজেলার সর্মাপুর গ্রামের ফরিদ হোসেন, বিলাশবাড়ি গ্রামের আমজাদ হোসেন, কেশাইল গ্রামের ওসমান আলী, বলরামপুর গ্রামের শাহাদত আলী মীর এবং তিলকপুরের নওজোর গ্রামের কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা অছিম উদ্দিন।