প্রেমের টানে গোপালগঞ্জ জার্মান তরুণী, করলেন বিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:০৭ অপরাহ্ন
প্রেমের টানে গোপালগঞ্জ জার্মান তরুণী, করলেন বিয়ে

প্রেমের টানে সুদূর জার্মান থেকে জেনিফার স্ট্রায়ার্স নামে এক তরুণী গোপালগঞ্জে এসে বাংলাদেশী প্রেমিককে বিয়ে করেছেন।


রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে গোপালগঞ্জের আদালতে এফিডেভিডের মাধ্যমে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।


বিয়েতে খুশি তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন। আশপাশের সবাই বাড়িতে ভিড় করছেন ভিনদেশী নববধূকে দেখতে। সেলফি তুলছেন অনেকেই।


জার্মান তরুণী জেনিফার গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে নামেন। সেখানে তার প্রেমিক চয়ন ইসলাম ও তার স্বজনরা তাকে স্বাগত জানান এবং রাতেই তারা জেনিফারকে নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরে চলে আসেন। শহরের মডেল স্কুল রোডস্থ ফুফাত ভাই আবদুর রহমানের বাড়িতে রাত কাটানোর পর রোববার সকালে পরিবারের লোকজন নিয়ে আদালতে গিয়ে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর শহরের কাশফুল রেস্টুরেন্টে নববধূকে নিয়ে চয়নের পরিবার ও আগত অতিথিরা খাওয়া-দাওয়া করেন।


জেনিফার একজন মাধ্যমিক লেভেলের শিক্ষার্থী। জার্মানির বাইলেফেল্ড স্টেটে বাবা-মায়ের সঙ্গেই বসবাস করেন। তার বাবার নাম জোসেফ স্ট্রায়াস ও মায়ের নাম এসাবেলা স্ট্রয়াস। মেয়ের বিয়েতে আনন্দিত বাবা-মাসহ জেনিফারের পরিবারের সবাই। জেনিফারের বাবা জোসেফ স্ট্রায়ার ও মাতা এসাবেলা স্ট্রায়াস মেয়ে জেনিফারের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সবসময় যোগাযোগ রাখছেন।


চয়ন ইসলামের বাবা রবিউল ইসলাম ইতালি প্রবাসী। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার যোতকুরা গ্রামে। বাবার বদৌলতে পারিবারিক ভিসায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইতালি পাড়ি জমায় চয়ন। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে চলে যায় জার্মানিতে।


জার্মানি গিয়ে একটি ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হয় চয়ন। সেখানেই পরিচয় হয় জেনিফারের সঙ্গে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রেমের সম্পর্ক উভয়ের পরিবার জানতে পারেন এবং দুই জনের সম্পর্ককে সবার পরিবার সাদরে গ্রহণ করে। ২০২২ সালের ১০ মার্চ চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন চয়ন। তবে জেনিফার ও চয়নের মধ্যে প্রেমের কোনো টানাপোড়ন হয়নি। জেনিফারের সঙ্গে চয়নের ভার্চুয়ালি যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। গোপালগঞ্জ পৌঁছানোর পর চয়নের স্বজনরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জেনিফারকে।


জেনিফার বলেন, জার্মানিতে এক স্কুলে পড়া অবস্থায় চয়নের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমি বাংলাদেশে চয়নের কাছে চলে এসেছি। আমার ও চয়নের পরিবারের সবাই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। আমি ও আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি। সারাজীবন আমি চয়নের সঙ্গে থাকতে চাই। এখানকার পরিবেশ, আতিথিয়তা ও সবার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পরিবারের সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছে।


চয়নের পরিবারের ছোট বড় সবাই খুব খুশী জেনিফারকে পেয়ে। অল্প সময়েই সে পরিবারের সবাইকে খুব আপন করে নিয়েছে। সে যে সবার সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারবে তা ভাবতে পারেনি ।


চয়ন জানান, জার্মানিতে পড়াশোনা করার সময় জেনিফারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে আমাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পাঁচ বছর ধরে আমাদের সম্পর্ক। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসি। ভালোবাসার টানে জেনিফার বাংলাদেশে চলে এসেছে। আমরা বিয়ে করেছি। আমার ও জেনিফার পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছে।


চয়নের ভাগ্নে (বোনের ছেলে) রাইয়ান রহমান অর্থ বলেন, নতুন মামিকে পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত, আমাদের খুব ভালো লাগছে। মামি অনেক ভালো। আমাদের অনেক আদর করে। সবাই আমার মামা-মামির জন্য দোয়া করবেন।


চয়নের ভাগ্নি সানজিদা আক্তার সিমি (বোনের মেয়ে) বলেন, জার্মান থেকে আমাদের মামি এসেছে। সে দেখতে অনেক সুন্দর। আমরা অনেক হ্যাপি।


চয়নের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, বিদেশি বৌমাকে পেয়ে আমরা সবাই খুশি। অল্প সময়েই আমাদের সবাইকে খুব আপন করে নিয়েছে। ভাবতেও পারিনি ও আমাদের সঙ্গে এত সহজে মিশতে পারবে। একমাত্র ছেলের বিয়ে দিয়েছি। জেনিফার আমার বাড়ির বউ হওয়ায় আমাদের পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছে।