শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয় "হাওয়াই মিঠা "

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: শনিবার ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয় "হাওয়াই মিঠা "

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মিঠাইয়ের নাম হচ্ছে হাওয়াই মিঠা। অঞ্চলভেদে কেউবা আবার এর নাম দিয়েছে 'শনপাপড়ি'। এখনো এটি গ্রামের মানুষের কাছে বিশেষ করে শিশুদের নিকট অনেক জনপ্রিয় খাবার। এক সময় ‘হাওয়াই মিঠাই’/'শনপাপড়ি' গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যেতো। কিন্তু সময়ের সাথে কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এটি এখন আর গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি দেখা যায় না। হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী হাওয়াই মিঠাই/'শনপাপড়ি'। তবে তা এখনো একেবারে বিলীনও হয়ে যায়নি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো মাঝে মধ্যে দেখা যায়।


খাওয়ার জন্য প্যাকেট খোলা বা হাতে নেওয়ার সাথেই বাতাসের সঙ্গে এই মিঠাই নিমিষে বিলীন হয়ে যায় বলেই এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’ বা 'শনপাপড়ি'। এটি হাতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মুখে দিয়ে খেতে হয়। হাওয়াই মিঠা খেয়ে পেট ভরে না।  তবে খেতে মিষ্টি লাগে। মুখের স্বাদ মেটায় শুধু। দেখতে অনেক বড়সড় মনে হলেও নিমিষেই এটি মুখের ভেতর এসে গলে যায়। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা এই মিঠাইয়ে বেশি আনন্দ পায়। বড়রাও এর স্বাদ থেকে পিছিয়ে থাকেন না। দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহ থাকে এই মিঠাইয়ের প্রতি।


ঐতিহ্যগতভাবে বাংলার বিভিন্ন মেলা এবং গ্রামের পথে ঘাটে পাড়া মহল্লায় বিশেষ করে ধান কাটার মৌসুমে দেখা পাওয়া যায় হাওয়াই মিঠাই বাক্স/'শনপাপড়ি' নিয়ে ফেরিওয়ালাদের। পিতল বা কাঁসার ঘন্টায় টিং টিং শব্দ তুলে শিশু-কিশোরদের দৃষ্টি কাড়েন তারা। হুমড়ি খেয়ে তাঁদের ঘিরে ধরে শিশু কিশোরের দল। শুধুমাত্র চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘুরানো ‘যাতা’য় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় এই ‘হাওয়াই মিঠাই।


দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার প্রত্যন্ত কোকতাড়া গ্রামের কোরবান আলী জানান, হাওয়াই মিঠা দেখলে খাওয়ার ইচ্ছা করে। মনে হয় কখন খাবো এই মিঠাই। এটি একটি মুখরোচক খাবার। এখনো গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আসলে আমি কিনে নিয়ে শিশুদের সাথে তাল মিলিয়ে মজা করে খাই। পাঁচ টাকা দিয়ে ‘হাওয়াই মিঠাই’ কিনে খাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে ছোট বেলায় যখন বাবা-চাচাদের সঙ্গে গ্রামের বাজারে বা মেলায় যেতাম। তখন প্রথম বায়নাটি ছিলো ‘হাওয়াই মিঠাই’ খাওয়ার। আর বেশির ভাগ সময় হাতের কাছে পেয়েও যেতাম এটি।


উপজেলার বিশাপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস জানান, হাওয়াই মিঠাই খেতে অনেক মজা। এখন আর তেমন দেখা যায় না। তবে এখনো গ্রামে  কেউ 'হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করতে আসলে আমি তার কাছে ছুটে যাই। হাওয়াই মিঠাই কিনে খাই একটা- দুইটায় মন ভরে না। আমি চার-পাঁচটা খাইতাম একবারে মুখে দিতাম আর নিমিষেই মুখের ভিতরে গলে যেত। আর এই কারণে এটি খেতে মজা-ই আলাদা। তিনি আরো বলেন, খাবারটি খুবই লোভনীয়। এটি দেখলেই শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চারা এটি বেশি পছন্দ করে।


গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের মশিউর রহমান (৪০) বর্তমানে হাকিমপুর পৌর শহরের মুহাড়াপাড়া গ্রামে বসবাস করে। গতকাল সে প্রত্যন্ত গ্রাম কোকতাড়াতে আসে স্বাদের হওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে। চলার পথে দেখা তার সাথে। তিনি জানান, প্রায় ১২ বছর ( একযুগ) ধরে ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করতেছি। আগের মতো এখন হাওয়াই মিঠা আর চলে না। কি আর করা ব্যবসাটা ছাড়তেও পারি না। তাই সারাদিন যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকমে সংসারটা চলে। আগে সারা বছরই এ ব্যবসা করে সংসার চালাতাম। কিন্তু, এখন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস  এ ব্যবসা একটু বেশি চলে। বিশেষ করে ইরি ধান কাটা মাড়াই ও আমন ধান কাটা মাড়াই এর সময় এটি বেশি চলে। আর মাঝে-মধ্যে গ্রাম গঞ্জে মেলা বসলে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি। 


তিনি আরো বলেন, “হাওয়াই মিঠাই একটি বিশুদ্ধ সামগ্রী, ভেজাল মুক্ত হওয়ায় এটি খেতে শিশুদের কোনো ঝুঁকি নেই। শিশুরা আনন্দ সহকারে এটি খেতে পছন্দ করে। আর আমিও  আনন্দের সঙ্গে তা বিক্রি করি। শুধু শিশুরাই নয় বড়রাও আমার কাছ থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে খায়। আমি গ্রামে গ্রামে সারাদিন ঘুরে এক'শ থেকে দেড়শোর মতো হাওয়াই মিঠাই এর প্যাকেট (প্রতি প্যাকেট ৫টাকা) বিক্রি করতে পারি। এতে আমার আয় হয়  ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এটাতে আমার সংসার চালায় কোন অসুবিধা হয় না। ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে ব্যবসাটা ভালো হয় বলে জানান তিনি।