জাতির জনক শব্দের বিলুপ্তির জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিবেদক - আইন আদালত
প্রকাশিত: রবিবার ১৯শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৭:৩১ অপরাহ্ন
জাতির জনক শব্দের বিলুপ্তির জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন

নরসিংদীর বাসিন্দা আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া জাতির জনক শব্দের বিলুপ্তি চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেছেন। রিট আবেদনটি রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে দায়ের করা হয়। রিটকারী জানিয়েছেন, এটি একটি জনস্বার্থ মামলা, যার উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস এবং সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা। 


রিটকারী দাবি করেছেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা যারা ছিলেন, তাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। তার মতে, একক ব্যক্তি কখনো একটি দেশ স্বাধীন করতে পারে না, এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অনেক নেতার অবদান রয়েছে। এজন্য তিনি জাতির জনক বা জাতির পিতা শব্দটির বিলুপ্তি চেয়েছেন, কারণ এটি একটি একক ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাসের প্রতি অবিচার। 


এছাড়া, রিটকারী আইনজীবী আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে ৯৩ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত জনগণ রয়েছে, এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিত এবং সে জন্য পাঠ্যপুস্তক ও গণমাধ্যমে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করা প্রয়োজন। 


তিনি আরো বলেন, যে সমস্ত মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে একটি কমিশন গঠন করা উচিত, যা তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে। রিটকারী মনে করেন যে, গণমাধ্যমে এবং পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হলে, দেশের যুব সমাজ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে পারবে এবং জাতির প্রতি তাদের কর্তব্য সচেতন হবে।


রিট আবেদনকারী দাবি করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরা না হলে ভবিষ্যতে জাতি ঐতিহাসিক ভুলে যেতে পারে, যা দেশের ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি অবমাননা হতে পারে। তাই, তিনি এই বিষয়ে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের সঠিকতা নিশ্চিত করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বীরদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান করবে।


আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া বলেন, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বীরদের সম্মাননা প্রদান এবং গণস্বার্থে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করার জন্য তিনি এই রিট আবেদন দাখিল করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় মানুষের কাছে দেশপ্রেম এবং জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় হবে, যা স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে সামনে আনবে।


তিনি বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আগামী প্রজন্মের কাছে একটি সঠিক ইতিহাস পৌঁছাতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশের ইতিহাসকে বিকৃত না করে, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত বীরদের অবদান যথাযথভাবে তুলে ধরলে জাতি আরও শক্তিশালী হবে। 


এছাড়া, রিটকারী দাবি করেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির ইতিহাসও যেন যথাযথভাবে গণমাধ্যম ও পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরা হয়। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা উচিত, যাতে ইতিহাসের কোন অংশই অসম্পূর্ণ না থাকে। 


রিটকারী আরও বলেন, জনস্বার্থে এ ধরনের পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এটি দেশের জনগণের জন্য একটি সঠিক ইতিহাস এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করবে, যা জাতির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 


এছাড়া, তিনি এই রিট আবেদনের মাধ্যমে জাতির জনক শব্দের পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশের ইতিহাস এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।