ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪: বিএনপি নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগে বিচারক মোতাহার হোসেনের ওপর ব্যাপক চাপ এবং হুমকির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এই ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। রায় ঘোষণার আগে বিচারককে চাপ দিতে ও ভয় দেখাতে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জহিরুল হক দুলাল সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন বলে জানা গেছে।
মামলার রায় ঘোষণার আগে বিচারক মোতাহার হোসেন স্বাভাবিকভাবে রায় ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে যায়। চারদিক থেকে নানা চাপ ও হুমকির মুখে পড়েন তিনি। বিশেষভাবে, আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা (পরবর্তীতে আইন সচিব) আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল বিচারক মোতাহার হোসেনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন এবং তার ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করেন।
জহিরুল হক দুলাল, ঢাকার ধানমণ্ডিতে একটি উচ্চ আদালতের বিচারপতির বাসায় বিচারক মোতাহার হোসেনকে ডেকে পাঠান। সেখানে উপস্থিত হন দুলাল এবং কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। একপর্যায়ে, কৌশলে ভয় দেখানোর জন্য কোমরে পিস্তল গুঁজে নিয়ে আসা হয়। বিচারক মোতাহার হোসেনকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, যেকোনো মূল্যে তারেক রহমানকে সাজা দিতে হবে।
বিচারক মোতাহার হোসেন জানান, মামলার সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়া সম্ভব নয়। সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে মামলায় সাজা দেওয়া আইনসম্মত হবে না বলেই তিনি মনে করেছিলেন। এরপরও তাকে চাপ দিয়ে সাজা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত, দুলাল বিচারকের বাসায় রায় লিখে পাঠান, কিন্তু মোতাহার হোসেন নিজেই তার লেখা রায় পড়েন এবং তারেক রহমানকে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেন।
রায় ঘোষণার পর, বিচারক মোতাহার হোসেন চরম নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার এক মাস আগের এই ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং পরে মালয়েশিয়া, নেপাল হয়ে ২০২২ সালে ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে যান। দেশে ফেরার চিন্তা করছেন তিনি, তবে এখনও নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিচারক মোতাহার হোসেন গণমাধ্যমের সাথে আলাপ করতে গিয়ে বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ফেরার চিন্তা করছেন তিনি। বলেন, দেশে ফিরে এসে কিছুটা শান্তি পাবেন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে বাংলাদেশ স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। এখন সময় বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এই ঘটনা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।