আশাশুনিতে পানিবন্দি ৭ গ্রাম, দূর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১১ই জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৩ অপরাহ্ন
আশাশুনিতে পানিবন্দি ৭ গ্রাম, দূর্ভোগ চরমে

আশাশুনির খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের ৭ গ্রাম বৃষ্টি, কপোতাক্ষ নদ ও মৎস্য ঘেরের লোনা পানিতে ১২ দিন ডুবে প্লাবিত হলেও প্রতিকারে কর্তৃপক্ষের তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে দেখা যায়নি। স্লুইজ গেটের পাঠ উল্টে দেয়ায় নদীর লোনা পানি ভেতরে প্রবেশ করে নতুন এলাকা ডুবতে শুরু করেছে। 


পানি বন্দি হয়ে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া, গোয়ালডাঙ্গা, পাঁচপোতা, বাইনতলা ও দক্ষিণ বড়-দল গ্রামের প্রায় পূর্ণাঙ্গ এলাকা। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে, কয়েক শত পরিবার। 


এরই মধ্যে গজুয়াকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ এলাকায় প্রাথমিক, মাদ্রাসা পানিতে ডুবে পানি বন্দি হয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অধিকাংশ বসতবাড়ির রান্না ঘরে এবং গোয়াল ঘরে পানি ঢুকে গবাদিপশু ও মানুষের খাদ্যের সমস্য সীমাহীন আকার ধারণ করেছে। আগে থেকেই এসব গ্রামে সুপেয় পানির সমস্যা ছিল, এরপর চারদিকে লোনা পানি জমায় সুপেয় পানির সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।


 

সরজমিনে ঘুরে, গজুয়াকাটি গ্রামের সত্য চন্দ্র বৈদ্য ও তেজেন্দ্র নাথ বৈদ্য জানান, গত ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত টানা হালকা ও মাঝারি বর্ষণে পার্শ্ববর্তী লোনা জলের চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে লোনা জলে খাজরা ইউনিয়নের গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া এবং বড়দল ইউনিয়নের পাঁচপোতা ও বাইনতলা গ্রামের আংশিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ১২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও জল অপসারণ না হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।


আমাদের এলাকার অধিকাংশ বসতঘর মাটির তৈরী। দীর্ঘদিন জল জমে থাকায় এক এক করে ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। রান্না খাওয়ার যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমন চারদিকে লোনা জলে ডুবে থাকায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে আছি। পশুখাদ্য (খড় গাঁদা) নীচে জল জমে থাকলে ভেসে যাওয়া শুরু করেছে। তাদের গোখাদ্য ও মিষ্টি জলের অভাব দেখা দিয়েছে। 

সহকারী অধ্যাপক শিবপ্রসাদ ম-ল জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের কালকির স্লুইসগেটের ভরাটি মুখ খনন করে পানি নিষ্কাশনের তড়িত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিকল্প পথ হিসেবে যদি বামনডাঙ্গা ও তুয়ারডাঙ্গা স্লুইসগেট অবমুক্ত করা যায় তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এসব খালে নেটপাটা থাকায় সহজে সমস্যার সমাধান করা অত্যান্ত কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়িছে। 


দক্ষিন বড়দল কৃষক সংগঠনের সভাপতি অসিম কুমার বৈরাগীসহ স্থানীয় অনেকে এ প্রতিবেদককে জানান, খাজরা ও বড়দল এলাকা এক ফসলি আমন ধানের এলাকা। অন্যান্য এলাকায় আমন চাষের চাষাবাদ শুরু হয়েছে আর আমাদের এলাকায় লোনা জলে জলাবদ্ধতার কারণে উপরোক্ত ৭ গ্রামের প্রায় ১২ হাজার বিঘায় আমন ধানের চাষাবাদে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। নীচু ঘরবাড়িতে বিষাক্ত সাপ পোকার ভয়ে অনেকেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম কালকি স্লুইসগেট গেইটের পলিমাটি অপসারণ করার চেষ্টা করতে গিয়ে রোববার দিবাগত রাতে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি উল্টো ভেতরে প্রবেশ করে দক্ষিণ বড়দল ও গজুয়াকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। এরমধ্যে নতুন করে জোয়ার তোলা হবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিকল্প পথে পানি নিষ্কাশিত না হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যাবে।


 তারা বলেন এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরে কানায় কানায় পানি জমে আছে। 

উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা জানান, ধান্য চাষের ভরা মৌসুম। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা না হলে এ এলাকার ধান্য চাষে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া কাচা ও আধা পাকা পানিতে ডুবে থাকা ঘরবাড়ী ও গৃহপালিত পশুর চরম ক্ষতি হবে। তিনি আরো বলেন, এখনো উঁচু এলাকায় কয়েকটি পুকুরে মিষ্টি পানিতে ডুবে আছে। নতুন করে জোয়ার তুললে ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাবে। 


ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম বলেন, রাতে পলিতে ভরাট হওয়া কারকির স্লুইজ গেটের পাটাতন ডুবে থাকায় তা তোলা হয়েছে। রাতে নদীর জোয়ার বন্দ করা সম্ভব না হওয়ায় জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করলেও সকালে গেট দিয়ে আর যাতে নতুন করে ভেতরে নদীর পানি প্রবেশ না করে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 


সচেতন এলাকাবাসির জানান, গেটের সামনের এলাকা অনেটা পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে, তা ছাড়া বিল এলাকার খাল ও আবাদি জমি নীচু হওয়ায় খাল খনন না করা পর্যন্ত কালকির গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা অত্যান্ত দূরহ ব্যাপার। এ ব্যাপারে কোন পাউবো, জেলা প্রশাসনসহ উর্দ্ধতন কোন কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসতে বা প্রতিকারে ব্যবস্থা গহনে এলাকায় দেখা মেলেনি।  অবৈধভাবে সুকৌশলে লোনা পানি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালে অবৈধ নেটাপাটা অপসারণ করে এলাকার পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করে আমন ধান চাষীদের পাশে দাঁড়াতে ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পাউবো কৃষিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তসহ সচেতন এলাকাবাসী।