ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে টিকিট কালোবাজারিদের থাবা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শনিবার ১৬ই এপ্রিল ২০২২ ০৪:৩০ অপরাহ্ন
ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে টিকিট কালোবাজারিদের থাবা!

দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ নৌরুট ঢাকা-বরিশাল। প্রতিদিনই এ রুটে যুক্ত হচ্ছে নতুনত্ব নির্ভর বিশালাকার লঞ্চ। যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মনোরম কেবিনের ব্যবস্থা রাখা হয় লঞ্চে। আর ঈদ মৌসুমে যাত্রীদের আকর্ষন করতে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো নতুন রূপে সাজে। প্রতি বছর ঈদের সময় দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বেশিরভাগ মানুষ নৌপথকেই বেছে নেন। 


তবে এবারের ঈদে গত দুই বছরের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে আশা করছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে টিকিট কালোবাজারিদের দৌড়াত্ম্য। তাই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে কোন প্রকার অনিয়ম বা লঞ্চের কেবিন পেতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি হবে না বলে দাবী করেছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা।


সূত্রমতে, গত দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারেনি অনেকেই, ছিলনা বাড়ি ফেরার আমেজ। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় তাই এবারের ঈদুল ফিতরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে আগ্রহ বেশি। দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে এরই মধ্যে বাড়ি ফেরার আগাম তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রতি বছর দুই ঈদ সামনে রেখে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে অত্যাধুনিক ও বিশালাকারের নতুন নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়েছে। লঞ্চের সঙ্গে বেড়েছে কেবিনের সংখ্যাও। তবুও সাধারণ যাত্রীদের কাছে এসব কেবিনের টিকিট পরিণত হয়েছে সোনার হরিণে। ফলে না চাইলেও উচ্চমূল্যে এইসব টিকিট কালোবাজারিদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বরিশাল নৌ রুটে মোট ২২ লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চে সিঙ্গেল, ডাবল, ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমিভিআইপি, শৌখিন ও ফ্যামিলি ক্যাটাগরিতে দুই হাজারের বেশি কেবিন রয়েছে। রমজান শুরুর পর থেকেই সাধারণ যাত্রী ও তাদের স্বজনরা এসব কেবিন পেতে লঞ্চের অফিসগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ওই সময় তাদের কাছ থেকে স্লিপ জমা রাখা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে তাদের নামে কোনো কেবিন থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে। 


কালোবাজারের দালাল চক্রের টিকিট বিক্রির এই পদ্ধতি পুঁজি করে সক্রিয় কিছু চিহ্নিত দালাল। আর এদের সাথে লঞ্চ কাউন্টারের কিছু অসাধু স্টাফের সখ্যতা রয়েছে বলে জানা গেছে। এইসব দালালের টিকিট পাইয়ে দিতে তারাই সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ কাউন্টারগুলোতে টিকিট না পাওয়া গেলেও বরিশাল নদীবন্দরে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা দিলেই দালালদের কাছে পাওয়া যায় কেবিনের টিকিট।


অভিযোগের বিষয়ে সুরভী লঞ্চের কাউন্টার ইনচার্জ ফারহান ফেরদৌস জানান, আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। স্লিপের মাধ্যমে ঈদের অগ্রিম টিকিটি আগে থেকেই বুকিং দিতে পারছে যাত্রীরা। একই সুরে কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার মো. বেল্লাল হোসেন জানান, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিনের টিকিট ছাড়া হয়। পরে এসে টিকিট না পেয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে নানা অভিযোগ করেন। স্লিপ অনুযায়ী যাত্রীদের টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করবেন। ইতিমধ্যে অনেক স্লিপ জমা পড়েছে বলে জানান তিনি। 


বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর কর্মকর্তা মোঃ মোন্তাফিজুর রহমান জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে বরিশাল নদী বন্দরের টার্মিনাল মেরামত সহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ শুরু হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও ভোগান্তি কমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ মাঠে কাজ করবে বিশেষ ভলান্টিয়ার টিম। নদী পথে কোন প্রকার অনিয়ম হবে না। সাধারণ যাত্রীরা সহজে কেবিন পাবেন।