ফেলে দেওয়া 'রাবিশ' দিয়ে সড়ক সংস্কার (!), দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নেছার উদ্দিন খান, স্টাফ রিপোর্টার, সাভার:
প্রকাশিত: শনিবার ২২শে জানুয়ারী ২০২২ ০৬:৪৬ অপরাহ্ন
ফেলে দেওয়া 'রাবিশ' দিয়ে সড়ক সংস্কার (!), দুর্ভোগ

দিন যায় দিন আসে, প্রতিনিয়ত মাতৃকোলে জন্ম নিচ্ছে হাজার শিশু। আবার আল্লাহর ডাকে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে মানুষ, এক কথায় সময় কারো জন্য বসে থাকে না। আর এই চলে যাওয়ার সময় এর মধ্যে মানুষ যে যার ভাগ্য বদলাচ্ছে।  কিন্তু সাভারের আশুলিয়ায় বাইপাইল টঙ্গী  সড়কে চলাচল করা গণপরিবহন বা সড়কের দুই পাশে ব্যবসা করা সকল ব্যবসায়ী এবং বসবাস করা মানুষ তাদের ভাগ্য কি কখনো সহায়ক হবে।


বলছি দেশের উত্তর-পশ্চিম জনপদের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক টঙ্গী-আশুলিয়া-ইডিজেড সড়ক। এসড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকায় দিনে কয়েক লাখ যানবাহন যাতায়াত করে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের অবহেলার যেনো শেষ নেই।


অনেক দিনের দুর্ভোগের এই সড়কে দুর্ভোগ আর দ্বিগুণ করতেই মনে হয় সড়কটির দ্বায়িত্ব নিয়েছে আশুলিয়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। গত দুই মাস থেকে দ্বায়িত্ব নেওয়ার পরই আরও করুন অবস্থা হয়েছে এই সড়কের। যেখানে সেখানে যানজটসহ সড়কে ছোটোবড় ক্ষনাক্ষন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু তাই নয় পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাতও পানির ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য কেটে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস ধরে৷


জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের পাশাপাশি সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে সম্পূর্ণ ঠিক ঠাক রাখারও কাজ করছেন এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সড়কটির সংস্করণ কাজ নিম্নমানের সামগ্রী ও রাবিশ (ব্যবহিৃত অযোগ্য ইটের গুঁড়া) দিয়ে করায় সড়কের অবস্থা আরও নাজেহাল হয়ে পরছে।


শনিবার  (২২জানুয়ারি) দুপুরে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড-ইপিজেড সড়কের জিরাবো, নরশিংহপুর, জামগড়া, ইউনিক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে রাস্তার এমন দুর্বিষহ অবস্থা।


আরও দেখা গেছে, পিচঢালা ও কার্পেটিং করা এই সড়কে বর্ষকালে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি পানি জমে গর্ত হয়েছে। সেই গর্তগুলো রাবিশ দিয়ে সংস্করণ করা হয়েছে৷ একারণে সংস্করণ করা নিম্নমানের ইট গাড়ির চাকার চাপে প্রতিনিয়ত উঠে যাচ্ছে ও ভেঙে গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। এতে সড়কে চলাচলরত যানবাহনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমন ছোটো থেকে বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে বিভিন্ন সময়। সুধু তাই নয় রাবিশ থেকে তৈরি হয় ধুলো-ময়লা। প্রায়সয় ধুলো উড়ে অন্ধকার হয়ে যায় এই সড়ক।


এদিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ করা গেছে সেই সময়। দেখা গেছে, সড়কের পাশে পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত থাকার কথা থাকলেও। সেখানে এখন মানুষ চলে না ফুটপাত দিয়ে চলে এখন কারখানার বর্জ পানি। এতে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কারখানায় যাতায়াতের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 


প্রতিদিন এই সড়ক হয়ে মোটরসাইকেল যোগে জিরাবো পোশাক কারখানায় যায় মাহবুবুল আলম রিপন। তিনি জিরাবো একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা। তিনি  বলেন, এই সড়ক নিয়ে কিছু বলার নেই। এখন শুকনো দিন এখন একটু ভালো থাকার কথা কিন্তু এখন আরও বাজে অবস্থা রাস্তার। সড়কে বিভিন্ন স্থানে ১ থেকে ৩ ফুট পরপর অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। সড়কের দুই পাশে ফুটপাত এবং খোলা আছে ড্রেনর মুখ একটু বৃষ্টি হলেই পানি রাস্তায় জমে যায়। বৃষ্টির  দিন তো মোটরসাইকেল চালানো যায়না অর্ধেক পানি উঠে যায়। আর এখন তো ধুলোর আর রাস্তা ভাঙ্গার কারণে চলাচল করা যায় না৷ তবুও কাজের তাগিদে কষ্ট করে যেতে হয়।


ইউনিক এলাকায় সড়কের পাশে চায়ের দোকানি জসিম বলেন, আজ প্রায় ৫-৭ বছর থেকে দেখছি রাস্তার এই অবস্থা। শুনেছি এই রাস্তা দিয়ে উড়াল সড়ক হবে। সেটা ভালো খবর। কিন্তু মানুষ এখন চলাচল করতে পারে না৷ আমি প্রতিদিনই দেখি রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, মালবোঝাই ট্রাক, পিকআপ, লরিসহ অন্যান্য যানবাহন মাঝেমধ্যে এসব গর্তে আটকা পড়ে। যানবাহনের চাকা গর্তে পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।


সড়কের পাশে কাউসার নামের মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক বলেন, একটা-দুইটা ভ্যান ভর্তি করে সড়কে এনে রাবিশ ফেলে সেটার উপর বুলডোজার  দিয়ে চাপ দিয়ে যায়। দুই দিন পর সেই রাবিশ গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ধুলাই পরিনত হয়। এই ধুলার কারণে আমরা দোকানও করতে পারি না। এই রাস্তাটা মানুষের চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানাই।


এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাধীক কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২০২৬ সালের জুনে চালু হবে। এই ২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজাহাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সঙ্গে সংযুক্ত করবে। চার লেনের সড়কের পাশাপাশি এক্সপ্রেসওয়েরও কাজ চলবে।


সড়কটির দ্বায়িত্বে থাকা প্রজেক্ট ম্যানেজার সাহাবুদ্দিন  বলেন, আমরা রাস্তাটি দুর অবস্থায় পেয়েছি। এই রাস্তাটি চার লেনের হবে। এখন রাস্তা যেমন আছে এর মধ্যই মোটামোটি রাস্তাটা ঠিক ঠাক করে রাখবো কিছু দিন। কারণ আমাদের তো আবার এক্সপ্রেসওয়ের পিলার করতে হবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে। এই পিলার গুলো করা আগের রাস্তার দুই সাইড দিয়ে ঠিক করে নিবো যেনো গাড়ি চলাচলে সমস্যা না হয়।


আর রাবিশ দিয়ে সড়ক সংস্করণের ব্যপারে তিনি বলেন, রাবিশ দিয়ে কাজ করা হচ্ছে টেমপরারি (সাময়িকভাবে)। এভাবে কি কখনো হয় নাকি। এই কাজ তো আন্তর্জাতিক মানের। সাময়িকভাবে এটা দেওয়া হয়েছে হয়তো। কিন্তু আমরা একদম ফ্রেস রাস্তা করবো। এবং ফ্রেসভাবে রিপিয়ার করবো। আসলে আমাদের ঠিকাদার দিয়ে জোর করে আনঅফিসিয়ালভাবে রিপিয়ার করানো হচ্ছে। সড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ের মেইন কাজ এখনো শুরু করতে পারিনি।


পরিপূর্ণভাবে কাজ শুরু হবে কবে থেকে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ এর কাছ থেকে কিছু দিন আগেই নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাস্তাটির সয়েল টেষ্টসহ খুটি নাটি কাজ শেষ করা হচ্ছে। মোবিলাইজেশন এডভান্স দেওয়ার পর যখন কমেন্সমেন্ট ডেট শুরু হবে। আমরা এখনো মোবিলাইজেশন দিতে পারিনি কিছু আইনগত ব্যপার আছে এর জন্য। এখন আমরা তাদেরকে দিয়ে রাস্তা রিপিয়ার করাচ্ছি যেনো রাস্তা আগের থেকে খারাপ না হয়। যখনি আমরা মোবিলাইজেশন দিয়ে দিবো তখই পরিপূর্ণভাবে রাস্তার কাজ তারা শুরু করবে।


রাস্তায় দুই কিলোমিটার অংশের পানি জমার বিষয়ে তিনি বলেন, রাস্তাটির দুই-আড়াই কিলোমিটার পানি জমে। আমরা বলছি তারাতাড়ি ড্রেইনটা কাজ করার জন্য। আমরা তো অনেক চেষ্টা করেছি। রাস্তার দুই পাশে থাকা পোশাক করাখনা থেকে ময়লার পানি সরাসরি একদম রাস্তায় নেমে আসে। তবে আমাদের এখন দুই সাইড দিয়ে বড় ড্রেন হবে। আর ড্রেনের উপরে ফুটপাত হবে যেহতু রাস্তাটা ছোটো। আমি যখন এই রাস্তাটির ইনঞ্জিনিয়ার ছিলাম তখন অনেক ভুগেছি পানির বিষয়টি নিয়ে। বর্ষার সময় পানি নিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর এই রাস্তাটির কাজে সাবারই একটু সহয়তা লাগবে।