করোনায় দৈনিক ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ১১ই এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫৫ অপরাহ্ন
করোনায় দৈনিক ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু

একটি সু’সংবাদের আশায় এখন সারা বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনছে, ‘মৃতের সংখ্যা কমে আসছে’। কিন্তু হায়! এই কথাটা লেখা তো দুরে থাক, চিন্তাই যেন করা যাচ্ছে না। কারণ, প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। যা শেষ এক সপ্তাহে হয়েছে দ্বিগুন।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ৩ এপ্রিল সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার পার হয়েছিল। গত বছর মধ্য ডিসেম্বরে উহানে করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর প্রায় সাড়ে তিন মাসে মৃত্যু ঘটেছিল ৫০ হাজার মানুষের। কিন্তু পরে মাত্র এক সপ্তাহেই সেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুন। অর্থ্যাৎ, বরাবর এক সপ্তাহের ব্যবধানে, ১০ এপ্রিল মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়ে গেলো এক লাখ।

মৃত্যুর এই পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি দিনের পর দিন কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখন প্রতি দিনই কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে। কখনো কখনো সেটা ৭ থেকে ৮ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

জ্যামিতিক হারে এরপর কিভাবে মৃত্যু বেড়েছে, সেটা লক্ষ্য করলেই শিউরে উঠতে বাধ্য যে কেউ। ৩ এপ্রিল রাতেই মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫০ হাজার। ৪ এপ্রিল লিখতে হলো, মৃত্যু ৬০ হাজার ছাড়ালো। এরপর ৭ এপ্রিল লেখা হলো মৃত্যুর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৭৫ হাজার। পরের দিনই লিখতে হয়েছিল মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ৮১ হাজার।

শেষ পর্যন্ত ১০ এপ্রিল রাতে, তথা ৫০ হাজার মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওযার ঠিক এক সপ্তাহ পর, লিখতে হলো, ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ পর কি লিখতে হবে, আল্লাহই হয়তো ভালো জানেন। কিন্তু পরিস্থিতি একের পর এক খারাপের দিকেই যাচ্ছে। কোথাও কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।

ওয়ার্ল্ডোমিটারে করোনা আপডেটে চোখ রাখলেই বোঝা যায়, কত দ্রুত আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি কয়েক সেকেন্ড পরপর পরিবর্তন হচ্ছে এই সংখ্যা। সর্বশেষ আপডেট (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেছে ১৭ লাখ (১৭ লাখ ১০ হাজার ৭৯৮জন)। মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৫১২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৭৩জন।

চীনের মূল ভূ-খন্ড উহানে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়। শুরুর দিকে শুধুমাত্র উহানেই সীমাবদ্ধ ছিল ভাইরাসটির বিস্তার। তবে ধীরে ধীরে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ইরানে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। ইরানে তাণ্ডব চালাতে চালাতেই ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসে ইতালিতে শুরু হয় করোনার প্রকোপ।

মার্চের শুরুর দিকেই ইতালিতে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। এরপর ইউরোপের বাকি দেশগুলো- স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এর উপস্থিতি বাড়তে থাকে আটলান্টিকের ওপারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে (৫ লাখ ৩ হাজার ১৭৭জন)। মৃত্যু ১৮ হাজার ৭৬১জন। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ইতালিতে। দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৭জন। মৃত্যু হয়েছে ১৮৮৪৯ জনের।

মৃতের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে স্পেন। ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩ জন আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭০ জনের। ফ্রান্সে মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ২২১ জনের। আক্রান্ত ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৯ জন। জার্মানিতে আক্রান্ত বেশি, মৃত্যু কম। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৬২৪ জন। মৃত্যু ২ হাজার ৬০৭ জন।

যুক্তরাজ্যেও মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে ৯৮০ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ৮৯৫৮ জন। ইরানে আক্রান্ত ৬৮ হাজার ১৯২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪ ২৩২ জন। বেলজিয়ামে মৃত্যু ৩ হাজার ৩৪৬জন। নেদারল্যান্ডসে মৃত্যু ঘটেছে ২৫১১ জনের।

এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া ১৭ লাখ ১০ হাজার ৭৯৮ জনের মধ্যে মৃত্যু এবং সুস্থ হওয়াজনিত কারণে ভাইরাস থেক মুক্তি মিলেছে মোট ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৫ জনের। এখনও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে, কিংবা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১২ লাখ ২৫ হাজার ২১৩ ব্যক্তি। এদের মধ্যে ৪ ভাগ তথা ৪৯ হাজার ৯১৩ জন রয়েছে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বাকি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩০০ জন এখনও ঝুঁকিমুক্ত।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব