ইতালিতে একদিনে প্রাণ গেল ৫৭০ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ১১ই এপ্রিল ২০২০ ০৯:২০ পূর্বাহ্ন
ইতালিতে একদিনে প্রাণ গেল ৫৭০ জনের

চীনের উহান শহর থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। মারাত্মক আকার ধারণ করা মহামারি করোনাভাইরাসে ইতালিতে আতঙ্কে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ। জনগণকে সুরক্ষা দিতে ইতালি সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

শুক্রবার মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে আরো ৫৭০ জন। বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা ছিল ৬১০ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার ১৮ হাজার ৮৪৯ জন। এদিন নতুন আক্রান্ত ৩ হাজার ৯৫১ জন। দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৯৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক হাজার ৯৮৫ জন। চিকিৎসাধীন ৯৮ হাজার ২৭৩ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৭ জন বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি।তিনি বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩০ হাজার ৪৫৫ জন।

ইতালির ২১ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। আজ এ অঞ্চলে মারা গেছে ২১৬ জন। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দশ হাজার ২৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৪৮ জন। আজ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২৪৬ জন।করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ঠিকভাবে সহায়তা করতে না পারলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভেঙে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনায় সৃষ্ট সমস্যাগুলোকে অবমূল্যায়ন করা মোটেও উচিত হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

করোনার প্রকোপে গত কয়েক সপ্তাহে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইতালি ও স্পেন। ব্যাপক অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা বা লকডাউনের কারণে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে তাদের অর্থনীতি। এই সংকট কাটাতে সব ঋণ ইইউয়ের সদস্য দেশগুলো মিলে বহন করাসহ একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ পাসের চেষ্টা করছে ইতালি। কিন্তু জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের বাধার মুখে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এর ভবিষ্যৎ।এ প্রসঙ্গে ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি ইউরোপের অস্তিত্বের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ইউরোপ যদি এত বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপযুক্ত আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে শুধু ইতালিরই নয়, গোটা ইউরোপের মানুষই গভীরভাবে অসন্তুষ্ট হবে।

বর্তমানে করোনা মহামারির অন্যতম কেন্দ্র ইউরোপ। এর কারণে ইতোমধ্যেই ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে স্পেন ও ইতালি। সারাবিশ্বের মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ইতালিতে। ইতোমধ্যেই সেখানে প্রাণহানির সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। স্পেনের অবস্থাও প্রায় একই। দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ আক্রান্ত ও ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন। যুক্তরাজ্যেও শিগগিরই একই অবস্থা হবে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, জনগণের মনে সাহস জোগাতে প্রায় প্রতিদিনই সান্ত্বনা দিয়ে টেলিভিশনে ভাষণ দিচ্ছেন। কারো যেন মনোবল এখনই দুর্বল হয়ে না যায় সেই কারণে করোনা মোকাবিলায় জনগণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। জোসেপ্পে কন্তে দেশজুড়ে ‘জরুরি নয়’ এমন সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বাড়ির বাইরে সবধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুপার মার্কেট, ফার্মেসি, পোস্ট অফিস ও ব্যাংক খোলা থাকবে এবং গণপরিবহনও সচল থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। তবে দেশের এই কঠিনতম সময় সহসাই কাটিয়ে উঠার আশ্বাস দেন তিনি। এদিকে আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে লকডাউন রয়েছে। লকডাউনের সময় আগামী ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তার আগে কিছু কিছু এলাকায় লকডাউন তুলে নেয়া হবে বলে বলা হয়েছে।


ইনিউজ ৭১/ জি.হা