আজ বিশ্ববাসীর জন্য এক বিভীষিকাময় দিন যা হিরোশিমা দিবস হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এই দিনটিতেই জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে প্রাণ হারান অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ভয়ার্ত ও শোকাবহ সেই ঘটনায় প্রতি বছর নিহতদের স্মরণ করেন শোকার্ত জাপানিরা।১৯৪৫ সালে জাপানই ছিল একমাত্র দেশ যার ওপর পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের ওপর দুবার পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ৬ আগস্ট হিরোশিমার তিন দিন পর অর্থাৎ ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় ৭৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
পরবর্তীতে ওই বছরের ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে জাপান। সাধারণ নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলাকে অনেকে যুদ্ধাপরাধ এবং নৃশংসতা মনে করেন। কিন্তু অনেকে আবার মনে করেন পারমাণবিক হামলার মধ্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। তবে এতদিন পর এসেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আবারও এমন যুদ্ধের সম্ভাবনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তথ্য অনুযায়ী, হিরোশিমা-নাগাসাকির ৭৪ বছর পার হলেও এখনো পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোতে বিপুলসংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে।বিবিসির প্রতিবেদন এবং গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে প্রায় আট হাজার, রাশিয়ার সাত হাজার, ফ্রান্সের ৪০০, যুক্তরাজ্যের দুই শতাধিক, চীনেরও তেমনই, ভারতের আছে প্রায় ১৩০টি, পাকিস্তানের ১৪০টি, ইসরায়েলের রয়েছে ৮০টি এবং উত্তর কোরিয়ার আছে ২০টি। সব দেশই এসব তথ্যের ব্যাপারে কড়া গোপনীয়তা বজায় রাখে। তবে সব মিলিয়ে পৃথিবীর মোট নয়টি পরমাণু বোমায় শক্তিধর দেশের হাতে এখনো নয় হাজার পরমাণু বোমা আছে।
এদিকে ১৯৮৭ সালে ‘কোল্ড ওয়ার’ বা শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে করা মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি আইএনএফ থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়াও একই চুক্তি থেকে বেরিয়ে নতুন করে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি ইরানও অন্য দেশগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি আরও শিথিল করে ব্যাপক হারে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো শুরু করেছে।অন্যদিকে, ব্যাপক বৈরী সম্পর্ক উতরে মিলিত হয়েছে উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে চুক্তি হলেও অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বিষয়টিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহজভাবে নিয়ে বিশ্ববাসী তা মোটেও একইভাবে দেখছেন না। কারণ, পরমাণু অস্ত্রের প্রভাব শুধু শত্রুপক্ষের দেশগুলোতেই নয় বরং পাশ্ববর্তী দেশগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে।
বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েব সাইট ‘ইউনিয়ন অব কনসার্নড’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, হিরোশিমার ৭৪ বছর পার হয়েছে। কিন্তু, পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি না কমে বরং তা বাড়তেই আছে। এই প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক ডেভিড রাইট বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বর্তমান সিদ্ধান্ত এবং পরমাণু চুক্তি নিয়ে টালবাহানার কারণে বিশ্বজুড়ে পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে এই পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। যা বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।’ সব পক্ষকে সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই পরমাণু চুক্তি এবং যেন যুদ্ধ না বাঁধে সে বিষয়ে আরও একবার ভাবার পরামর্শ দেন ডেভিড রাইট।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।