নয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন মুসলিম!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ২৪শে জুলাই ২০১৯ ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
নয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন মুসলিম!

যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট হার্ডলাইনার নেতা বরিস জনসন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বুধবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে তিনি সরকার গঠনের অনুমতি নেবেন। সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই জনপ্রিয় নেতা একসময় ছিলেন লন্ডনের মেয়রও। তবে ব্রিটিশ এই শ্বেতাঙ্গ রাজনীতিবিদের শেকড় যুক্তরাজ্যে নয়। তুরস্কের ওসমানি খেলাফতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তার বংশধর। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম হুরিয়াত ডেইলি জানায়, জনসনের দাদার বাবা আলী কামাল ছিলেন ওসমানি খেলাফতের দামাত ফেরিত পাশা সরকারের একজন মন্ত্রী। ওসমানি যুগের এই সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ তিন মাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সেসময়। কবি ও লেখক হিসেবেও স্বীকৃত ছিলেন কামাল

১৯১৯-১৯২৩ সালে তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী এই রাজনীতিবিদকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ ইউরোপে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। ১৯২২ সালে তুরস্কের রাজনৈতিক সংকটের সময় গণপিটুনিতে নিহত হন আলী কামাল। তার পরের বছরই ক্ষমতায় আসেন মোস্তাফা কামাল পাশা। যাকে তুরস্কের জাতির জনক বলা হয়। সাংবাদিকতা করার সময় একাধিক দেশ ঘুরে বেড়িয়েছিলেন তিনি। সুইটজারল্যান্ড ঘুরতে গিয়ে অ্যাঙ্গলো-সুইস নারী উইনিফ্রেড ব্রানের প্রেমে পড়েন। ১৯০৩ সালে তাকে বিয়ে করেন আলী কামাল। উইনিফ্রেডের মৃত্যুর পর তিনি তুরস্কের এক প্রভাবশালী পাশার মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই ঘরে জন্ম নেওয়া জেকি কুনেরালপ ছিলেন সুইটসজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং স্পেনে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত। 

আলী কেমালের উত্তরসূরি বরিস জনসন ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। ইটন কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন। ব্রিটিশ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনসন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানকার স্টুডেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৫৫ বছর বয়সী জনসন মধ্যবিত্ত এক ব্রিটিশ পরিবার থেকে উঠে আসেন। তার বাবা স্ট্যানলি জনসনও ছিলেন রাজনীতিবিদ। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ মেম্বার হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তবে শুরু থেকেই নারী ও বোরকা বিষয়ে মন্তব্য করে বিতর্কিত বরিস জনসন। এর আগে যুক্তরাজ্যের কোনো প্রধানমন্ত্রী এতটা বিতর্কিত ছিলেন না।

১৯৯৬ সালে ডেইলি টেলিগ্রাফে লেখা কলামে তিনি লেবার পার্টির নারী সদস্যদের ‘যৌন আবেদনময়ী’ বলে মন্তব্য করেন। ১৯৯৮ সালে একই পত্রিকার কলামে তিনি সমকামীদের আক্রমণ করেন। ২০১৮ সালে মুসলিম নারীদের বোরকা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্রিটিশ রাজনীতিতে হাসির খোরাক হয়েছিলেন জনসন। ডেইলি টেলিগ্রাফে লেখা এক কলামে তিনি বলেন, ‘বোরকা ও নেকাব পরিহিত নারীদের দেখতে চিঠির বাক্সের মতো লাগে।’ বোরকা পরিহিতদের ‘ব্যাংক ডাকাতদের’ সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। তখন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বরিসকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। মে বলেন, ব‌রিসের মন্তব্য ‘সুস্পষ্ট অবমাননা’। তবে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করেন জনসন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব