সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা নয়, এমনকি ঘরোয়া আড্ডা বা ‘অফ দ্য রেকর্ড’ কথাবার্তাও নয়। প্রথম দিনেই বিজেপি তথা এনডিএর নতুন সাংসদদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেন নরেন্দ্র মোদি। শনিবার (২৫ মে) এনডিএর সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। গত পাঁচ বছরে সাক্ষী মহারাজ থেকে এবার ভোট প্রচারে প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর বিতর্কিত মন্তব্য করে বারবার বিজেপিকে বিপাকে ফেলেছেন। নাথুরাম গডসেকে দেশভক্ত বলে ফেলায় মোদিকে বলতে হয়েছে, তিনি কখনওই প্রজ্ঞাকে ক্ষমতা করতে পারবেন না। মোদি বলেন, কিছু নেতা বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সব সময় খবরে থাকেন। তাদের সতর্ক থাকতে হবে। মিডিয়ার লোকেরাও জানে, ছয় জন এমন নমুনা রয়েছে, যাদের সামনে পৌঁছে গেলে কিছু না কিছু বলবেই।
লালকৃষ্ণ আদবাণীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘দিখাস-ছপাস’র লোভ থেকে বাঁচতে হবে। মোদির সাবধানবাণী, সংবাদমাধ্যম নানা রকম বিষয়ে বয়ানের জন্য অনুরোধ করবে। সব তথ্য যাচাই করে তবেই মন্তব্য করবেন। ‘অফ দ্য রেকর্ড’ আলাপচারিতা বলে কিছু হয় না। কার পকেটে কী যন্ত্র রয়েছে, কেউ জানে না। আগের মেয়াদে মোদির বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল যে, তিনি সাংবাদিক বৈঠক করেন না। এবার বাকিদেরও একই পথে হাঁটার বার্তা দিচ্ছেন কি না, এ প্রশ্ন তাঁর আজকের বক্তৃতার পরে উঠছে। সেই সঙ্গে বেফাঁস কথা বলার উপরে রাশ টানতে চাওয়ার প্রয়াসও অবশ্যই স্পষ্ট। সেই সঙ্গে মোদীর নির্দেশ, ভিআইপি সংস্কৃতি ছাড়তে হবে। বিমানবন্দরে চেকিং হলে খারাপ লাগলে চলবে না। আগের বার প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি প্রথমেই লালবাতি সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ দিনের বক্তৃতায় আর একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল, কে মন্ত্রী হবেন, কে হবেন না, তা নিয়ে জল্পনায় আগল দেওয়ার চেষ্টা। নতুন সরকারে কে ক্যাবিনেট মন্ত্রী, কে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন, তা নিয়েই এখন আগের সরকারের মন্ত্রী, প্রবীণ-নবীন সাংসদদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আগের সরকারের অন্তত এক ডজন মন্ত্রী এবার আর পদ মিলবে না বলে আশঙ্কা করছেন। কিন্তু বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি বলেন, কারা কারা জিতে এসেছেন, তিনি এখনও সেই তালিকাই দেখে উঠতে পারেননি। মোদি একদিকে যেমন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে সাংসদদের বারণ করেছেন, তেমনই সংবাদমাধ্যমের কথায় সাংসদদের বিশ্বাস করতেও মানা করেছেন। তিনি বলেন, সরকার আর কেউ তৈরি করবেন না। যার দায়িত্ব, তিনিই তৈরি করবেন। খবরের কাগজের পাতা থেকে মন্ত্রী তৈরি হয় না। মন্ত্রিপদ যায়ও না। কেউ মন্ত্রী পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বললে, তাকেও বিশ্বাস করতে নিষেধ করেছেন মোদি।
তবে মোদি যা-ই বলুন, বিজেপির অনেক নেতাই মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। জেডি(ইউ), শিবসেনা, এডিএমকে-র মতো শরিক নেতারাও মন্ত্রী হওয়ার জন্য বিজেপির শীর্ষস্তরে দরবার শুরু করেছেন। জানা গেছে, এবার মন্ত্রিসভায় অনেক নতুন মুখ থাকবে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, তেলঙ্গানার মতো রাজ্য থেকে মন্ত্রী করা হতে পারে। ওড়িশা থেকে জুয়াল ওরাম, সুরেশ পূজারি, অপরাজিতা ষড়ঙ্গী মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন। তেলঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদের সাংসদ কিষাণ রেড্ডি মন্ত্রী হতে পারেন। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডাও ক্যাবিনেটে আসতে পারেন। জেডি(ইউ) ও শিবসেনা, দুই শরিক দলই তিনটি করে মন্ত্রক পেতে পারে বলে আশা করছে। নীতীশ কুমার রেলমন্ত্রী ছিলেন। জেডি(ইউ) ফের রেল মন্ত্রকের দাবিদার। এডিএমকে তামিলনাড়ুতে মাত্র একটি আসন জিতেছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পনিরসেলভামের ছেলে পি রবীন্দ্রনাথ কুমার। তাকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়ার দাবি তুলেছে এডিএমকে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।