শুক্রবার দুপুরে জুমআর নামাজ পড়ার সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে শেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের বন্দুক হামলায় ৪৯ জন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মধ্যে অকল্যান্ডের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সারাবিশ্ব। হুমকির মুখে পড়েছে ‘শান্তির দেশ’ হিসেবে নিউজিল্যান্ডের পরিচিতি। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েও। মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর পুরো নিউজিল্যান্ডে উচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। এদিকে, ডানেডিনে সন্ত্রাসীরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে শহরটিও ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ক্রইস্টচার্চে সকল ধরণের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, অকল্যান্ডের ব্রিটমোর্ট ট্রান্সপোর্ট সেন্টার রেলস্টেশনে দুইটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পাওয়া যায়। পুলিশ ও বোমা নিস্ক্রিয়কারী দল দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরবর্তীতে ‘নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ’ ঘটিয়ে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয় বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এছাড়া নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রাইস্টচার্চ শহর কর্তৃপক্ষ। এর আগে, ডানেডিন-ক্রাইস্টচার্চ বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ডানেডিনে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা রয়েছে এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। কথা ছিল, সংবাদ সম্মেলনটা শেষ করে জুমা আদায় করতে ঠিক দেড়টা নাগাদ পার্শ্ববর্তী আল নুর মসজিদে যাবেন বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনটা দীর্ঘায়িত হয়েছিল বেলা ১টা ৪০ পর্যন্ত। হয়তো সেটাই রক্ষা করেছে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে। সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই জুমা ধরতে বাসে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বাসটি পৌঁছে গিয়েছিল যথাসময়েই। টিম টাইগারের সদস্যরা তখন মসজিদের সামনে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। মসজিদে প্রবেশ করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে মসজিদের ভিতর থেকে মধ্য বয়সের এক নারী রক্তাক্ত অবস্থায় টলোমলো পায়ে বেরিয়ে এসে রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। তামিমরা তখনো বুঝতে পারেননি, আসলে কী ঘটছে ভিতরে। এরপরই ভেসে আসে সতর্কবাণী। একজন চিৎকার করে বলে ওঠেন, মসজিদের ভিতর গুলি চলছে। অবস্থা দেখে তামিম, তাইজুল, মিরাজরা দ্রুত হেঁটে এসে বাসে উঠে পড়েন। এ সময় পুলিশ ওই রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে বেশ কিছুক্ষণ বাসেই বসে থাকতে হয় তামিম, মুশফিকদের। তবে গুলির শব্দ ও আতঙ্কে তারা অনেকটা সময় বাসের ভেতর মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। এ ভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর নিরাপদে মাঠে ফিরে আসেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলন অনেক ক্রিকেটারের কাছেই একটি অস্বস্তিকর একটি বিষয়। বিশেষ করে দল হারতে থাকলে অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে তোলে এসব অনুষ্ঠান। ফলে অনেকে এসব সংবাদ সম্মেলন এড়িয়ে যেতে পারলে বা তাড়াতাড়ি তা শেষ করে দিয়ে আসতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। কিন্তু শুক্রবার এ ঘটনার পর তামিমদের কাছে ওই সংবাদ সম্মেলনটি অনেক নিশ্চয়ই অনেক মধুর বলে মনে হচ্ছে। কারণ ওই সংবাদ সম্মেলন না থাকলে হয়তো তারা আরো আগেই মসজিদে পৌঁছে যেতেন। এমনকি ঠিক সময়মতো শেষ হলেও হয়তো হামলার মুখে পড়তে হতো বাংলাদেশ টিমকে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার সকালে লিটন দাস ও নাঈম হাসান ছাড়া দলের সবাই ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভাল মাঠে অনুশীলনে করেন। সেখান থেকেই আল নুর মসজিদে যাচ্ছিলেন জুমার নামাজে যোগ দিতে। এ দিনের হামলার পরই টুইট করেন তামিম ইকবাল। এ ঘটনাকে ‘ভয়ের অভিজ্ঞতা’ বলে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, পুরো দলই বন্দুকধারীর হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে। সবাই আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে কেঁদে ফেলেন দলের অন্যতম সদস্য মুশফিকুর রহিম। মাঠে ফিরেও আতঙ্ক কাটছিল না তাঁর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, দলের বেশির ভাগ সদস্য মসজিদে যাওয়ার জন্য বাসে ছিলেন। মসজিদে ঢোকার মুহূর্তে হামলার ঘটনাটি ঘটে। আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।