রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় চার বছর পার হলেও সমাধানের কোনো সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যাতে রয়েছে মোট ২৮টি পয়েন্ট। পরিকল্পনার খসড়া গতকাল ফাঁস হয়ে বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএনসহ বিশ্বের প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে। ফাঁস হওয়া খসড়া অনুসারে, যুদ্ধাবসান নিশ্চিত করতে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই কঠোর কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।
পরিকল্পনার প্রথম শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে—ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি বিস্তৃত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তি হবে, যাতে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা যুক্ত থাকবে।
দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী, শান্তি পরিকল্পনায় সম্মতি জানানোর ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রসঙ্গ। তৃতীয় শর্ত অনুসারে, ইউক্রেনকে এসব অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে এগুলোকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এমনকি দখলকৃত ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে—এ তথ্য পরিকল্পনায় স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। ফলে ইউক্রেন যদি স্বীকৃতি না দেয়, তবুও এই অঞ্চলগুলো নিয়ে কিয়েভ কোনো দাবি উত্থাপন করতে পারবে না।
পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ৬ লাখ সদস্যের বেশি হতে পারবে না বলেও চাপে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে সক্রিয় সৈন্যসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার। তাছাড়া ইউক্রেন কখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না—এই নিষেধাজ্ঞাও রাখা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—ইউক্রেন কখনও ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। ন্যাটোও ইউক্রেনে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্যতা কিয়েভ বজায় রাখবে।
অতীতের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে—রাশিয়া শান্তি পরিকল্পনায় সম্মত হলে প্রেসিডেন্ট পুতিনসহ রুশ কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল বা বাতিল করা হবে।
২০১৪ সালে জি৮ থেকে বহিষ্কৃত রাশিয়াকে ফের জি৭-এ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে পরিকল্পনায়। পাশাপাশি হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া রাশিয়ার ফ্রিজড অর্থ থেকে ১ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেনের অবকাঠামো উন্নয়নে এবং ১ হাজার কোটি ডলার শিল্প খাতে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেনের জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ শতাংশ মালিকানা রাশিয়ার কাছে যাবে—এটিও পরিকল্পনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মোট মিলিয়ে পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের ওপর ব্যাপক রাজনৈতিক–সামরিক চাপ তৈরি করবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।