প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ২১:৫৫
মার্কিন আগ্রাসনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান এবার এক কৌশলগত সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে, যা গোটা বিশ্বকে নাড়া দিতে পারে। দেশটির পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে, যা বিশ্ব জ্বালানি পরিবহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। ইরানের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা ইসমাইল কাওসারি জানান, মার্কিন আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, তবে পার্লামেন্টের এই অবস্থান ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করছে।
বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত হয়। এই পথটি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য একমাত্র সমুদ্রপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে কাতার থেকে এলএনজি পরিবহন এবং সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি রপ্তানি হয়। এই রুটে সামান্য ব্যাঘাত ঘটলেও বৈশ্বিক বাজারে তেল ও গ্যাসের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছিলেন যে, যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়, তাহলে বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এমনকি প্রণালী বন্ধের প্রথম সপ্তাহেই তেলের দাম ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন অনেকে। বিকল্প রুট ব্যবহার করাও খরচবহুল এবং সময়সাপেক্ষ, যা সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে চাপে ফেলবে।
ইরানের প্রেস টিভি জানিয়েছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার পর দেশটির রাজনৈতিক ও কৌশলগত মহলে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং সমুদ্রপথেও প্রতিরোধের চিন্তা শুরু হয়। প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই যুদ্ধ শুধু স্থলেই নয়, বরং সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি মার্কিন প্রশাসনের জন্যও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যদি প্রণালী বন্ধ হয়, তবে বিশ্বব্যাপী বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির কার্যক্রম থেমে যেতে পারে। কারণ, তারা শক্তিনির্ভর কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি গভীর মন্দার দিকে ধাবিত হতে পারে।