পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান জেলার একটি সেনানিবাসে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬ জন হামলাকারী, ৪ শিশু, ২ নারীসহ ১৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছেন। পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইফতারের সময় সেনানিবাসের এলাকায় দু’টি বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি প্রবেশ করে এবং পরপর দু’টি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে কাছাকাছি একটি মসজিদ ও একটি বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার পরপরই চারপাশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে এবং আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট হেডকোয়ার্টার হাসপাতালের মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামলায় ২৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে সেনা সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তিরা রয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকভর্তি গাড়িগুলো আগে থেকেই চিহ্নিত করা হয়েছিল, তবে সেগুলো দ্রুত সেনানিবাসে প্রবেশ করায় বিস্ফোরণ ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
এর একদিন আগেই খাইবার পাখতুনখোয়ার একটি মাদ্রাসায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় স্থানীয় এক তালেবান নেতা নিহত হয়েছিলেন। ধারাবাহিকভাবে এসব হামলার ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিভিন্ন হামলায় ১৬০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৮৫ জন পুলিশ ও সেনা সদস্য।
পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। টিটিপি ও এর সহযোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব হামলার জন্য দায়ী বলে জানা গেছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসেও টিটিপির সহযোগী গোষ্ঠী হাফিজ গুল বাহাদুর পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে সেনাঘাঁটিতে আত্মঘাতী হামলা চালায়, যেখানে ৮ জন সেনা ও ১০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়।
সাম্প্রতিক হামলার পর পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এ ধরনের হামলা কতটা প্রতিহত করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।