নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আদাতলা সীমান্ত থেকে সিরাজুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বুধবার রাত ৩টার দিকে ৪৪/১ এস পিলার এলাকা থেকে ভারতের অভ্যন্তরে নাইরকুড়ি এলাকায় তাকে আটক করা হয়। সিরাজুল ইসলাম উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের ওসমান আলীর ছেলে। তার স্ত্রী এজেলা খাতুন জানান, মঙ্গলবার রাতে কয়েকজনের সাথে তার স্বামী ভারতে গিয়েছিল। সকালে সবাই ফিরে এলেও সিরাজুল আর ফেরেনি। যারা ফিরে এসেছে, তাদের কাছ থেকে আটকের বিষয়টি জানতে পারেন তিনি।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কয়েকজন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গরু আনতে যায়। রাত ৩টার দিকে ৪৪/১ এস পিলার এলাকা দিয়ে দেশে ফেরার সময় ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার নাইরকুড়ি বিএসএফ ক্যাম্পের টহলরত জোয়ানরা তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা পালিয়ে আসতে পারলেও সিরাজুল ইসলাম ধরা পড়েন এবং বিএসএফ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
নওগাঁ ব্যাটালিয়ান ১৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সাদিকুর রহমান জানান, বিএসএফ হাতে বাংলাদেশি কেউ আটক হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও অনেক বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে আটক বা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী, অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে সংশ্লিষ্ট দেশের বাহিনীকে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময় সরাসরি গুলি চালানো বা দীর্ঘ সময় আটকে রাখার ঘটনা ঘটে।
সীমান্তে এ ধরনের ঘটনার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক সময় গরু আনতে গিয়ে কিংবা ভুলক্রমে সীমান্ত পার হলে বাংলাদেশিরা বিএসএফের হাতে আটক হন। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, গরু পাচারের জন্য অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতে সীমান্ত অতিক্রম করেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের আটকে নিয়ে যায় বা নির্যাতন করে। কিছু ক্ষেত্রে কয়েকদিন আটক রেখে বিজিবির সাথে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়, আবার অনেককে ফেরত পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
বিজিবির একজন কর্মকর্তা জানান, সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। অনুপ্রবেশের ঘটনা রোধে বিজিবি টহল জোরদার করেছে। তবে অনেক সময় স্থানীয় চোরাকারবারিরা গোপনে সীমান্ত পার হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সিরাজুল ইসলামকে দ্রুত ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে। তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।