কক্সবাজারের টেকনাফে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জড়ো করে রাখা ১৯ জনকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী। সোমবার গভীর রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মধ্যম কচ্ছপিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ২ জন বাংলাদেশি এবং ১৭ জন রোহিঙ্গা। আটক করা হয় এক পাচারকারীকে, যিনি রোহিঙ্গা নাগরিক বলে জানা গেছে।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, নৌবাহিনীর কাছে খবর আসে যে মধ্যম কচ্ছপিয়ার পাহাড়ি এলাকায় কয়েকটি ঝুপড়ি ঘরে বেশ কিছু লোককে জড়ো করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, তাদের সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচার করার পরিকল্পনা চলছে। নৌবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন পালানোর চেষ্টা করে। ধাওয়া করে একজন পাচারকারীকে আটক করা সম্ভব হয়।
উদ্ধার হওয়া ১৯ জনের মধ্যে ৮ জন নারী এবং ১১ জন পুরুষ রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন শিশু। আটক পাচারকারীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের মালয়েশিয়া পাচার করতে প্রতিটি ব্যক্তির কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আর্থিক কষ্টে ভুগছিলেন এবং পাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে এই বিপদে পড়েছেন।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নৌবাহিনীর সদস্যরা জানান, পাচারের জন্য সাগরপথ ব্যবহার করে অপরাধীরা দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ চালিয়ে আসছে। আটক পাচারকারী এবং উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে টেকনাফ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই কুতুপালং এবং বালুখালী শিবির থেকে এসেছেন। সেখানকার দালালদের মাধ্যমে তারা পাচারকারীদের সংস্পর্শে আসে। এদের মধ্যে অনেকে জানতেন না যে তাদের সাগরপথে পাচার করা হবে। দালালরা তাদের নিরাপদ জীবনের লোভ দেখিয়ে এখানে জড়ো করেছিল।
স্থানীয়রা জানায়, মধ্যম কচ্ছপিয়া এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে পাচারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে পাচারকারীরা এখানে সহজেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক অভিযানের পর স্থানীয়রা আশাবাদী যে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাগরপথে মানবপাচার রোধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। উদ্ধার হওয়া নারী, পুরুষ এবং শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। আটক পাচারকারীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও বড় চক্রের খোঁজ চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে মানবপাচারের ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এই পথে সহজ শিকার হয়ে থাকে। দালালদের লোভনীয় প্রস্তাবে পা দিয়ে তারা বিপজ্জনক যাত্রায় অংশ নেন। অতীতে অনেকেই এই পথে পাচার হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।