মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলমান সহিংসতার মধ্যে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এক সপ্তাহের যুদ্ধে মংডু, বুথিডং এবং পালেতাওয়ার শহরসহ প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের অন্তর্বর্তী সরকার।
রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত যেসব এলাকায় রোহিঙ্গারা বসবাস করেন, সেগুলি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তও বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে। এ কারণে সরকার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। তবে, খলিলুর রহমান সতর্ক করে বলেছেন, গভীরভাবে বিবেচনা না করেই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
এদিকে, সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৈরি হওয়া নতুন বাস্তবতায়, বাংলাদেশ সরকার সীমান্তের নিরাপত্তা বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, যার ফলে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান লড়াইয়ের মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা অতীতে জান্তা বাহিনীর সহযোগী ছিল। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-এর যোদ্ধারা জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু, এতে শেষরক্ষা হয়নি। এখন, নতুন করে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধের সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে গোষ্ঠীহিংসার পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য চুক্তি হলেও মিয়ানমারের জান্তা সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমানে, মিয়ানমারে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এখনও বসবাস করছে, এবং নতুন শরণার্থী ঢলের আশঙ্কা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সীমান্ত এলাকায় বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, এবং এর ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যত এখনো অনিশ্চিত।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।