চাকরির সুযোগ বাড়ছে সাইবার নিরাপত্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৯ই এপ্রিল ২০২১ ০৩:৫০ অপরাহ্ন
চাকরির সুযোগ বাড়ছে সাইবার নিরাপত্তায়

যুক্তরাষ্ট্রে ইঞ্জিনিয়ারিং লিড ও সিনিয়র সাইবার সিকিউরিটি অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশি মার্কিন গোলাম মুর্তজা এনবিসি, সিএনবিসি ইউনাইটেড এয়ারলাইনস, এ আই জি পিস হেলথের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বাস করছেন নিউইয়র্কে।


যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে ফরচুন ১০০ কোম্পানির নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের লিডার হিসেবে কাজ করেছেন গোলাম মুর্তজা। এ সময় বহুমুখী সাইবার অ্যাটাক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করেন এবং কার্যকরী মিটিগেশন স্টেপস গ্রহণ করেন।


আলাপকালে মুর্তজা বলেন, সাইবার সিকিউরিটি এখন গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ইস্যু। অবিশ্বাস্য  হলেও সত্য, প্রতিদিন লাখ লাখ অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে। আর নতুনভাবে উদ্ভাবিত হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ নতুন ম্যালওয়্যার/স্পাইওয়্যার (ডেটা হ্যাক/চুরি করার ক্ষতিকারক সফটওয়্যার। যার টার্গেট হচ্ছে আপনার আমার মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইমেইল অ্যাকাউন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান কিংবা সোলার উইন্ডোর মতো সফটওয়্যার কোম্পানি, যেখানে  মাইক্রোসফট বা আপেলও এদের হামলার বাইরে নয়। সাইবার অ্যাটাকের বাইরে নেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেকশন কিংবা ফেডারেল গভর্নমেন্টের সার্ভারও।


মুর্তজা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, এনবিসি ইউনিভার্সেলে সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সময় একবার ২০১৮ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের ওয়েবসাইট হঠাৎ করেই সাইবার অ্যাটাকের কারণে ডাউন হয়ে যায়। টিমের যৌথ প্রচেষ্টায় কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার সাইট আপ করতে সক্ষম হন তাঁরা।


২০২০ সালের শুরুর দিকে মুর্তজা নেশনওয়াইড সাইবার অ্যাটাক ডিটেকশন ও অটোমেটিক্যালি অ্যানালাইসিস ও মিটিগেশনের কাজসম্পন্ন করেন ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের সিনিয়র সাইবার সিকিউরিটি অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার লিড হিসেবে। এ ছাড়া তিনি ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ১ লাখ ৮ হাজার এমপ্লয়ির জন্য ফিশিং ও ম্যালওয়্যার অ্যাটাক অটোমেশনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেন।


আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের (এআইজি) লিড সাইবার সিকিউরিটি অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কোম্পানির প্রায় ৫০ শতাংশ সাইবার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট অটোমেটেড করেন এবং ৯০ শতাংশ ফলস পজিটিভ ফিশিং ইন্সিডেন্ট অটোমেটিক্যালি হ্যান্ডেল করার কাজও সার্থকভাবে সম্পন্ন করেন মুর্তজা। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিরাপত্তায় কাজ করেন গোলাম মুর্তজা। নর্থ ডাকোটা রাজ্যের সিকিউরিটি প্লেবুক অটোমেশন ও জেনারেল সাইবার নিরাপত্তায় তিনি অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করেন। গোলাম মুর্তজা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনেও এ ধরনের অটোমেটেড সাইবার সিকিউরিটি অ্যাপ্লাই করে নির্বাচনকে অনেক নিরাপদ করতে পারি।’


ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে মেধা তালিকায় প্রথম হন মুর্তজা। গ্রিন টেকনোলজির ওপর এক্সট্রা অর্ডিনারি রিসার্চের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সেও বেষ্ট অ্যাওয়ার্ডের সম্মাননা পান তিনি। ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার সিকিউরিটির ওপর পড়াশোনা করেন। পরে লিডারশিপ ফেলোশিপ করেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে।


মুর্তজা বলেন, উদ্বেগের ব্যাপার হলো, পৃথিবীজুড়ে সাইবার অ্যাটাকের ঝুঁকি যত বাড়ছে, ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সেক্টরের নিরাপত্তার গুরুত্ব। আর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে লাখ লাখ সাইবার নিরাপত্তায় বিশেষজ্ঞদের কদর অর্থাৎ চাকরির সুবর্ণ সুযোগ। আমরা যারা এই খাতে কাজ করছি, আমাদের সবার উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের নাগরিক ও পৃথিবীর সর্বত্রই বাংলাদেশি অভিবাসীদের সাইবার নিরাপত্তায় এগিয়ে আসা। আর যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো কোনো ঘটনা আমাদের না ঘটে।


গোলাম মুর্তজা বলেন, আমরা যেভাবে সাইবার সিকিউরিটি ডেভেলপ করি, ঠিক তেমনিভাবে যদি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োগ করা হয়, তবে প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ সাইবার অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, নতুন প্রজন্মকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ করে গড়ে তোলা, সরকারকে সহযোগিতা ও পলিসি প্রণয়ন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট ও সাবজেক্ট চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেন মুর্তজা।