সম্প্রতি ইসরায়েলকে শক্তিশালী করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে ইরানও নিজের শক্তি জানান দিয়েছে। ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্থগিত করা ইসরায়েলের জন্য শত শত বোমার চালান আবার ছাড় করেছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান হাতে পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইরানের রিভোলুশনারি গার্ড বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা আলি শাদমানি মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার তৈরি এই যুদ্ধবিমান সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল। রাশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি ২০ বছরের চুক্তি সই করার পর এই অত্যাধুনিক বিমান হস্তগত হয়েছে বলে জানা গেছে। আলি শাদমানি জানান, রাশিয়ার সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়েও চুক্তি হয়েছে। আগামী দিনে সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান ইরানেই উৎপাদন করা হবে, যার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো তৈরি করে দেবে রাশিয়া।
ইরানের এই অর্জনকে তাদের সামরিক সক্ষমতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে ইরান এখন ইসরায়েলের মাটিতেও বিমান হামলা চালাতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ইরান সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালালে মিসাইল ব্যবহার করত, কিন্তু এবার বিমান হামলার ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে তাদের সামরিক কৌশলে বড় পরিবর্তন আসছে।
আলি শাদমানি সতর্ক করে বলেন, যদি শত্রুরা বোকার মতো আচরণ করে, তাহলে আমাদের মিসাইলের আঘাতের তেতো স্বাদ পাবে। তাদের অধিকৃত কোনো অঞ্চলই আর নিরাপদ থাকবে না। ইরানের এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান কিনতে মস্কো-তেহরান চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালেই সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ইরান। দেশটির কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার জানিয়েছিলেন, রাশিয়া বেশ কিছু সুখোই-৩৫ বিক্রি করবে।
২০০৭ সাল থেকেই রাশিয়ার অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানে নজর ছিল ইরানের। তখন এসইউ-৩০এমকে কিনতে চেয়েছিলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। কিন্তু জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ও রুশ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তহীনতায় সেই চুক্তি ভেস্তে যায়। ২০১৫ সালে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও সেবারও তা ব্যর্থ হয়।
ইরানের বিমানবাহিনীর বহরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো মডেলের যুদ্ধবিমান রয়েছে। তাই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান পেতে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ইরানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে রাশিয়া তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই যুদ্ধবিমান হস্তগত হওয়ায় ইরানের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরানের এই অর্জন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ইরানের সামরিক শক্তির এই উল্লম্ফন আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের এই পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইরানের সামরিক শক্তির এই উল্লম্ফন ভবিষ্যতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে এখনই বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।