মুখ থুবরে পড়েছে শেবাচিমের বার্ন ইউনিট!

Ziaul Hoque
জিয়াউল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৬ জুলাই ২০২৩, ৩:২৪

শেয়ার করুনঃ
মুখ থুবরে পড়েছে শেবাচিমের বার্ন ইউনিট!

অভিজ্ঞ চিকিৎসক, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক অপারেশন থিয়েটার না থাকায় মুখ থুবরে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। ফলে অগ্নিদগ্ধ জটিল রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় প্রেরণ করা হচ্ছে। আর এখানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তারাও ধুকছে দিনের পর দিন। সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারে দুই দফা বিস্ফোরণে দগ্ধদের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলেও তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে সচেতন মহলে রীতিমত ক্ষোভ বিরাজ করছে। গোটা দক্ষিণের অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জীবন বাঁচাতে বিভাগের একমাত্র এই বার্ন ইউনিটটির দিকে নজর দেওয়ার দাবি জানান স্বাস্থ্য রক্ষা কমিটি, বরিশালের সভাপতি ডা. সৈয়দ হাবিবুর রহমান।

সূত্রমতে, ২০১৫ দালের মার্চ মাসে চালু হওয়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট চিকিৎসক শূন্যতার কারণে ২০২০ সালের ১৮ মে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডের পর এখানে ৮১ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হলে পুনরায় বার্ন ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকা ও রংপুর থেকে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন রেজিস্টার ও একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট যোগদান করার পর গত ২৩ মে থেকে পুনরায় চালু হয় এই ইউনিট। কিন্তু এ ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান সম্প্রতি দুর্ঘটনায় আহত হলে আবারও মুখ থুবড়ে ইউনিটটি। এখন রান্নায় দগ্ধ কিংবা চুলার আগুনে দগ্ধ যারা ভর্তি হচ্ছে তাদেরও সেবা এখানে সুনিশ্চিত নয় বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন।

নানাবিধ সংকটের কারণে শেবাচিমের সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অগ্নিদগ্ধ রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পরছেন। অনেক রোগীরা এখানে এসে ফেরত যাচ্ছেন। বিত্তবানরা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গেলেও হতদরিদ্ররা এখানে এসে আহাজারি করছেন। অর্থের অভাবে ঢাকায় যেতে না পারা রোগীরা শেবাচিমের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া অগ্নিদগ্ধ রোগীরা জানান, এখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বড় চিকিৎসকরা প্রতিদিন একবার কোনোরকম রাউন্ডে এসে ওষুধ লিখে দেন। এরপর আর তাদের দেখা মেলেনা। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরাই রোগীদের একমাত্র ভরসা। তাই ভর্তি হয়ে কয়েকদিন ভোগান্তির শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে রোগীদের হাসপাতাল ত্যাগ করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত একমাসে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন আউট ডোর ও ইউনিটে মোট ৩২২ জন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার্ন ইউনিটে প্রফেসর, রেজিস্টার, ২ জন সহকারী রেজিস্টার ও ইএমওসহ ৬ জন ডাক্তার ও অন্তত ১০ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় অগ্নিদগ্ধ রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে এখানে কর্মরত ২৩ জন নার্সের মধ্যে ২১ জনেরই কোনো বার্ন প্রশিক্ষণ না থাকায় সেবা বিঘিœত হচ্ছে। নার্সদের পক্ষ থেকে বার বার প্রশিক্ষণের দাবি তোলা হলেও তা কাজে আসেনি।

https://enews71.com/storage/ads/01JQ184AJV9F0T856X9BBSG85X.gif

শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার নেই। নেই গুরুতর অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সেবা দেওয়ার মতো উন্নত আইসিইউ/এইচডিইউ। ফলে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ এবং শ্বাসনালীতে আঘাতপ্রাপ্তদের এখানে রাখা যাচ্ছে না। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের অনুরোধেও ঢাকায় রোগী রেফার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞরা কোনো রোগীকে তার ইউনিটে না রেখে ঢাকায় পাঠাতে চাইলে সেখানে তাদের কিছুই করার থাকে না। তাদের মতে বরিশাল বিভাগের একমাত্র এই বার্ন ইউনিটটিতে শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০০০ অগ্নিদগ্ধ সেবা পেয়েছেন। এখানে অপারেশন করা হয়েছে অন্তত ২ হাজার জনের। তবে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমস্যা অচিরেই সমাধান করা হবে বলেন তিনি।

https://enews71.com/storage/ads/01JR36BQSKCPE69WB8Z3TARXE3.jpg

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা

https://enews71.com/storage/ads/01JR3CX28Y9BM01PRE4TXCNDWF.jpg

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সমন্বয়

দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সমন্বয়

রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতি বছর মৌসুমি রোগ হিসেবে দেখা দিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু সারা বছর ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে মহামারির দিকে যাচ্ছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যেতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমেও রোগীর

একদিনে ডেঙ্গুতে আরও ১০ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৬৯ জন

একদিনে ডেঙ্গুতে আরও ১০ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৬৯ জন

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রভাব এখনও কমার নাম নেই। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ১ হাজার ৬৯ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বুধবার বিকেলে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত একদিনে

আন্তর্জাতিক অটিস্টিক স্পিকিং ডে: নতুন দিগন্তে বাংলাদেশের স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি

আন্তর্জাতিক অটিস্টিক স্পিকিং ডে: নতুন দিগন্তে বাংলাদেশের স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি

আজ ১ নভেম্বর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অটিস্টিক স্পিকিং ডে, এমন একটি দিন যা বিশ্বজুড়ে অটিজমে থাকা ব্যক্তিদের কণ্ঠ ও সক্ষমতাকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে উদযাপিত হয়। সমাজে তাদের অংশগ্রহণ ও প্রকাশের সুযোগ বাড়ানোর এই উদ্যোগ প্রতিবারের মতো এবারও নতুন অনুপ্রেরণা নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশেও এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। কারণ, দেশের দুইজন স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট—ফাতেমা আক্তার বনি ও এইচ. এম. আবু বকর সিদ্দিক—সম্প্রতি

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু, ৯২৮ ভর্তি

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু, ৯২৮ ভর্তি

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৯২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকায় ৩৪৫ জন এবং বাকি ঢাকার বাইরে থেকে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৬৯,৩৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৯৮৩

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৯৮৩

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কোনোভাবেই কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত এই রোগে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে চলতি বছরে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৯ জনে। একই সময়ে নতুন করে ৯৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত একদিনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মারা গেছেন ৪ জন, আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি