স্তনের সমস্যার কথা বললেই প্রথমেই কী মনে হয়? অধিকাংশ মহিলাই ভেবে নেন স্তন ক্যানসার (Breast cancer)। হ্যাঁ, এই অসুখের কথা হয়তো অনেকের মুখেই শোনা যায়। তাই স্তনে কিছু একটা অসামঞ্জস্য দেখলেই প্রথমেই আতঙ্কিত হন এটা ভেবে। আসলে স্তন ক্যানসার ছাড়াও স্তনের অনেক রকমের অসুখ রয়েছে। ক্লিনিক্যাল প্রাকটিসের সময় চিকিৎসকরা দেখেন প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে স্তনের সমস্যা নন-ক্যানসারাস। এই ধরনের অসুখ মহিলাদের খুব বেড়েছে আজকাল। যেগুলির ব্যাপারে অনেকেই অবগত নন। তাই ক্যানসার ছাড়াও স্তনের অন্য অসুখ সম্পর্কেও জানা জরুরি।
স্তনের অসুখের কারণ:
মহিলাদের যে ঋতুচক্র হয় তার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। অর্থাৎ বয়ঃসন্ধির সময় একজন মহিলার ঋতুচক্র শুরু হয়। তারপর তা ৪৫-৫০ বছর পর্যন্ত চলে এবং তার পর ঋতুচক্র বন্ধ হয়। এই তিনটি পর্যায়ে শরীরে নানা রকম হরমোনাল পরিবর্তন হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন এক্ষেত্রে মূল যুক্ত। ঋতুচক্র চলাকালীন একরকম, ঋতুচক্র বন্ধ হলে আর এক রকম আর পুরোপুরি বন্ধ হলে অন্যরকম। আবার গর্ভাবস্থায় আর একরকম। ফলত একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই সমস্যা হয়।
নন-ক্যানসারাস স্তনের সমস্যা:
অধিকাংশ মহিলা বিশেষত ১৫-৩০ শতাংশ মহিলা যখন ক্লিনিকে আসেন তখন যে লক্ষণ নিয়ে আসেন তা হল স্তনে ব্যথা বা যন্ত্রণা। এটা মূলত দু’ধরনের হয়। ঋতুচক্রের সঙ্গে অনেকেরই এই ধরনের স্তনের ব্যথা বাড়ে বা কমে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় সাইক্লিক্যাল ম্যাস্টালজিয়া। এর মূ্ল কারণ হরমোন্যাল ফ্ল্যাকচুয়েশন। অর্থাৎ যাদের স্বাভাবিক হরমোন্যাল ফ্ল্যাকচুয়েশনের চেয়ে বেশি মাত্রায় হরমোনের ওঠা-নামা হয় শরীরে তার প্রভাব কিন্তু স্তনের উপর পড়ে। বিশেষত ঋতুচক্রের আগে বা পরে এই কারণে স্তনে ব্যথা হয়।
আর এক ধরনের ব্যথা স্তনে হয়, যার সঙ্গে ঋতুচক্রের কোনও যোগসূত্র থাকে না। সবসময়ই হতে পারে। একে বলা হয় নন সাইক্লিক্যাল ম্যাস্টালজিয়া। সবচেয়ে বেশি যে কারণে এমন হয় তা হল মহিলাদের পাঁজরে ব্যথা থেকে স্তনে ব্যথা অনুভব করে। এছাড়া বুকের পেশিতে ব্যথা, হার্ট বা ফুসফুসে ব্যথা অনেক সময়ই স্তনে ব্যথা হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। কোনও কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রেও স্তনে ব্যথা হয়।
ব্যথা হলে ভয় নেই:
স্তন ক্যনসার হলে সেক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় কোনও ব্যথাই থাকে না। তাই স্তনে ব্যথা অনুভব হলে ক্যানসারের চেয়ে বেশি নন-ক্যানসারাস সমস্যার সম্ভাবনাই বেশি।
ত্রিস্তরীয় নিরীক্ষণ খুব দরকার-
যে লক্ষণ নিয়েই রোগী অসুখ, সর্বপ্রথম ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন জরুরি। অর্থাৎ চিকিৎসক নিজে রোগীর স্তন পরীক্ষা করেন।
দ্বিতীয়ত, বয়স ৩৫-৪০ বছরের ঊর্ধ্বে হলে ম্যামোগ্রাফি ও আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা জরুরি।
আর বয়স ৩৫-৪০ বছরের নিচে হলে সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র আল্ট্রাসাউন্ড করতে হয়। তৃতীয়ত দরকার, নিডল বায়োপসি করা।
এই তিনটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব স্তনে ক্যানসারের বীজ লুকিয়ে নেই। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রোগীর অপারেশন করা হবে, না কি ওষুধেই কাজ হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নন ক্যানসারাস স্তনের সমস্যা সময়মতো চিকিৎসা করলে সেরেই যায়।
সমস্যার প্রতিরোধ:
কোনও বয়সেই ওজন বাড়তে দেওয়া চলবে না। ওজন বেশি হলেই হরমোনাল সমস্যা বেশি বাড়বে। মহিলাদের সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে হবে। হেলদি ডায়েট ও নিয়মিত এক্সারসাইজ করা খুবই জরুরি।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।