রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোমেনীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছে অনুষদের ১২জন ছাত্রী। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ সেলে ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাবির যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেলের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, শরীরে হাত দেয়া, পোশাক ও শরীর নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা, মেসেঞ্জারে অশ্লীল ভিডিও ও ছবি পাঠানোসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তোভোগী কয়েকজন শিক্ষার্থী পরিচয় গোপন রেখে বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা আমিরুল স্যারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আসছি। আমরা স্যারকে দেখলে রীতিমত ভয়ে থাকি। তিনি বিভিন্ন জায়গায় সবার সামনেই কুরুচিপূর্ণ কথা বলে হেসে ওঠেন। আমাদের পোশাক নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন। মাঝে মাঝে খুবই বাজে ভাষায় আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। শরীরেও হাত দেন।’ ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, মানসিকভাবে সহ্য করতে না পেরে আজ অভিযোগ করেছি।
এদিকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, কারণে অকারণে অধ্যাপক আমিরুল মোমেনীন তাদেরকে বিভিন্ন কুরচিপূর্ণ ভাষায় মন্তব্য করেন। অফিসে ডেকে বসিয়ে রাখেন। ফ্রি মাইন্ডের কথা বলে নানা রকম ইঙ্গিতপূর্ণ ও অশালীন কথাবার্তা বলেন। অনেকসময় সবার সামনে গায়ে হাত দেন। অন্য নারী শিক্ষকদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন।’
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, ‘স্যার পরীক্ষায় নম্বরের কথা বারবার উল্লেখ করে শিক্ষকের ক্ষমতা দেখাতেন ও বিভিন্ন রকমের অশালীন আচরণ করতেন। তার হয়রানিতে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছি। পড়াশুনাসহ অন্য কোনো কাজেই মনযোগ দিতে পারছি না।’
ভুক্তভোগীরা বলেন, আমাদের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী স্যারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রতিনিয়তই এটা ঘটে চলেছে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক বিচারের আশ্বাস দিলে আরও অনেক ভুক্তভোগী হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানাতে পারবে।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক আমিরুল মোমেনীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। দীর্ঘ ২৬ বছর থেকে শিক্ষকতা করে আসছি। কখনও এরকম ঘটনা ঘটেনি।’
যৌন নিপীড়ন সেলের সদস্য সচিব ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, ‘অভিযোগগুলো দেখে আমি শঙ্কিত হয়ে গেছি। এক শিক্ষার্থীকে তার পাঠানো একটি ভিডিও দেখলাম। একজন শিক্ষক কিভাবে এমন কাজ করতে পারেন!’ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এর আগেও অধ্যাপক আমিরুলের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা এবং অনুষদের ডিন বরাবর মৌখিক অভিযোগ করেন বলে বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুকদার বলেন, সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে জানায় যে, অধ্যাপক আমিরুল তাদেরকে হয়রানি করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাকে বিস্তারিত কিছু বলেনি। যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে থাকলে আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা সঠিক জায়গায় অভিযোগ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।