নানা আয়োজনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম দিবস উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে নভেম্বর ২০১৯ ০৬:৩৭ অপরাহ্ন
নানা আয়োজনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম দিবস উদযাপন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৪১তম দিবস উদযাপিত হয়েছে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, হল, বিভাগ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্র সংগঠন সহ সকল পর্যায়ের শিক্ষানুরাগীগণ।

১৯৭৯ সালের এই দিনে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলার সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠ। প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দিবস উদযাপন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলন এবং পতাকা উত্তোলন শেষে পায়রা ও বেলুন উড়ানোর মাধ্যমে ইবির ৪১তম দিবসের উদ্বোধনী করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী, বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম তোহা ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আব্দুল লতিফ। সকাল পৌনে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন হল, বিভাগ, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষে হয়। পরে সকাল ১০ টায় প্রশাসন ভবনের নিচে কেক কাটা হয় এবং কেক কাটা শেষে একই স্থানে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জুম্মার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মঙ্গল কামনায় উপস্থিত সকল মুসল্লিদের সাথে নিয়ে দোয়া মুনাজাত করেন কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম কাম খতিব ড. আ.স.ম. শোয়াইব আহমাদ। বিকাল ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বাংলা মঞ্চে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। 

সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটোক, প্রশাসন ভবন, হলগুলো সহ বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবনগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। সেখানে শোভা পাচ্ছে রংবেরঙের আলোকসজ্জা। একই সাথে শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিরাজ করেছে আনন্দের জোয়ার।

উল্লেখ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠ ৪০ বছর অতিক্রম করে ৪১ বছরে পদার্পণ করেছে। ২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ১৭৫ একর জমিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৮০ সালের ১৮ই জুলাই কারণবশত সরকারি আদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি এন্ড  ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন এবং উলূমুত তাত্তহীদ ওয়াদ দা’ওয়াহ বিভাগ, মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত হিসাব বিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের মোট তিনশত ছাত্র  ভর্তি করা হয়। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ৮ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়া শহরে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা শিক্ষক নিয়োগ ও ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ছাত্রী ভর্তি করানো হয়। এরই সাথে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরে পিটিআই এবং প্যারামেডিক্যাল ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৯২ সালের পহেলা নভেম্বর  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে নিয়ে আসা হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধর্ম ও বর্ণের দেশী ও বিদেশী ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ধর্মতত্ব, কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, ব্যবসায় প্রশাসন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, জীববিজ্ঞান, অনুষদীয় বিষয়ের পাশাপাশি দেশে শুধুমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামী আইনের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ ৮ টি অনুষদের অধীনে ৩৪ টি বিভাগ চালু রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার এবং শিক্ষক রয়েছেন প্রায় সাড়ে চার শতাধিক। ইন্সটিটিউট রয়েছে একটি। ছাত্রদের জন্য ৫ টি আবাসিক হল এবং ছাত্রীদের জন্য ৩ টি আবাসিক হল। এ ছাড়াও চলমান মেগা প্রকল্পের বাজেটের আওতায় বহুতল বিশিষ্ট ছাত্রদের জন্য ২টি এবং ছাত্রীদের জন্য ২টি আবাসিক হল নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন এ সব হলগুলোতে আবাসনের সুযোগ সৃষ্টির হবে ১ হাজার জন শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম ৫ বছর মেয়াদী অর্গ্রানোগ্রাম অনুমোদন পায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। অর্গানোগ্রামটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ হবে ৫৯টি, শিক্ষক সংখ্যা হবে ৯৯০ জন, কর্মকর্তা-কর্মচারী হবে ২ হাজার ৮৩ জন, শিক্ষার্থী হবে ২৫ হাজার ১১১ জন, অনুষদ হবে ৮টি এবং ইনস্টিটিউট হবে ৩টি। যেখানে প্রতি ২৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক নিযুক্ত হবে। ইতোমধ্যে অনুষদ ৮ টি করা হয়েছে। বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ, বিটিআইএস, বিবিএ, বিএসএস, এলএলবি, বিএসসি, এমএ, এমটিআইএস, এমবিএ, এমএসএস, এলএলএম, এমএসসি ডিগ্রী ছাড়াও এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়। দীর্ঘ এ ৪০ বছরের পথচলায় সমাবর্তন হয়েছে ৪ বার। প্রথম সমাবর্তন ১৯৯৩ সালের ২০ এপ্রিল, দ্বিতীয় সমাবর্তন ১৯৯৯ সালের ৫ নভেম্বর, তৃতীয় সমাবর্তন ২০০২ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় এবং সর্বশেষ চতুর্থ সমাবর্তন দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৮ সালের ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই সমাবর্তনে প্রায় ১০ হাজার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর  সনদ প্রদান করা হয়।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব