‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামটির ইতিহাস আমাদের সকলের জানা আছে। কনসার্টটির মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শরনার্থী বাঙালিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। আর এখন উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় বসবাসরত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকার বিভিন্নভাবে ত্রাণ-সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও ভোগান্তি যেন বেড়েই চলেছে। এমন সংকটে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতেই এমন গানের আসর বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহীর বিনোদনের কেন্দ্রস্থল পদ্মার পাড়ে গেলেই চোখে পড়ে একসাথে অসংখ্য তরুণ-তরুণীরা বসে গান করছে গিটারের তালে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেরা বিনোদিত হওয়া এবং দূর থেকে ঘুরতে আসা মানুষদেরকে বিনোদন দেওয়া। তবে এক্ষেত্রে ঘটলো অন্য কিছু। ‘সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে একদল রাবি ছাত্ররা গানের আসর বসিয়েছে। তাদের এই গানের আয়োজনে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের তারকা নাজমুল ইসলাম পলাশ ও তার দল। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য গান শুনিয়ে শ্রোতাদের দেয়া অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
জানতে চাইলে নাজমুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘গানকে ভালোবাসি তাই গান গেয়েই মানুষের উপকার করতে চাই। এর আগে অনেকবার বিভিন্ন জনের চিকিৎসার জন্য আমরা গান গেয়ে টাকা সংগ্রহ করেছি। এতে করে আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি। এবার বন্যার্তদের জন্য এসেছি টাকা সংগ্রহের জন্য। আশাকরি এবারও আমাদের সংগ্রহ করে বন্যার্তদের পাশে দাড়াতে পারব। তিনি আরো বলেন, পদ্মা গার্ডেনে আজ (শুক্রবার) দেড় ঘন্টা গান করে ১০ হাজারের বেশি টাকা সংগ্রহ করে দিতে পেরেছি গাইবান্ধা জেলে ছাত্র কল্যাণ সমিতির কাছে। মোট ৪০ জন পদ্মা গার্ডেন থেকে সর্বমোট ৩৭ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছে। আশা করছি এই পরম্পরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা ধরে রাখবে। এবং বন্যা হোক বা দেশের মানুষের যেকোন বিপদে তারা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবে।
গাইবান্ধা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিনারুল ইসলাম লিখন বলেন, ‘স¤প্রতি বন্যায় গাইবান্ধার বেশ কিছু অ ল পানির নিচে চলে গেছে। এমতাবস্থায় সেখানকার মানুষের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ কারণে আমরা গাইবান্ধা ছাত্র কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে অর্থ সংগ্রহের আয়োজন করেছি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হল থেকে ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছি। পরে সাহেববাজার, পদ্মা গার্ডেনসহ নগরীর বেশ কিছু এলাকায় টাকা সংগ্রহ করে বন্যার্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করব।
তিনি আরো বলেন, শনিবার সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা উঠাতে পেরেছি। রবিবার প্রতিটি বিভাগে সাহায্যের জন্য টাকা তোলা হবে। কি ধরনের খাবার দেওয়া যায় তা আলোচনা করেই এই সপ্তাহের মধ্যেই বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ কর্মসূচি শুরু করব। এদিকে, বন্যার ফলে গাইবান্ধা জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ ১২ হাজারের অধিক মানুষ।
এ ছাড়া চারটি উপজেলার ৩৯৩ হেক্টর জমির পাট, শাকসবজি, বীজতলা ও আউশ ধান পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দী মানুষের জন্য ৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির সংকটে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। সরকার বিভিন্ন ভাবে বন্যাকবলিত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসলেও ভুক্তোভোগী সকলের দ্বারে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন ত্রাণ-সামগ্রি পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে একদিকে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব যেমন বেড়েছে তেমনি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যাবস্থা না থাকায় নোংরা পানির সংস্পর্শে নানা ধরনের রোগে সংক্রমিত হচ্ছে।
এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় বিত্তবানদেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাহায্য পাঠাতে পারেন-
মনারুল ইসলাম লিখন
বিকাশ -০১৭৭৪৩৮০৫৬০
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।