সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এ খোলা চিঠি পাঠ করেন এক শিক্ষার্থী।
চিঠিতে বলা হয়, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক রাষ্ট্রপতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক প্রতিনিধিস্বরূপ উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন। দেশের কল্যাণে নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নে নিবেদিত আছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের সামনে নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক ছাত্রী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উওর বিনা উসকানিতে ও সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের নিষ্ঠুর হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
'জনগণের টাকায় ক্রয়কৃত আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শিকার হন নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী যার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২৬ এর অধিক। এর মধ্যে কারও মাথা ফেটেছে, কারও রাবার বুলেট বা সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষত হয়েছে। ছাত্রীদের উপর নিষ্ঠুরভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ করেছে’ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এই হামলায় মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল এবং উপাচার্য তার দায়িত্বর বরখেলাপ করেছে জানিয়ে খোলা চিঠিতে বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দাবি না মেনে পুলিশি হামলায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলায় শাবিপ্রবি উপাচার্য যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন, তা সরাসরি সংবিধান বিরোধী এবং আপনার কর্তৃক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উপর অর্পিত দায়িত্বের বরখেলাপ।'
এ ঘটনায় শাবিপ্রবির বর্তমান ও সাবেক সকল শিক্ষার্থী হতবাক ও সংক্ষুব্ধ- উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মহামান্য আচার্য তার জীবন অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের ভালোমন্দ অনুধাবনের সক্ষমতা রাখে। এটা পরিষ্কার যে আপনার প্রতিনিধিরূপে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের সকল যৌক্তিক, নৈতিক ও সাংবিধানিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। এই ঘটনা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে যে এই অথর্ব, অযোগ্য ও স্বৈরাচারি ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী ক্ষমতায় বহাল রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রের পরিপন্থী।'
ক্যাম্পাস কোনো যুদ্ধক্ষেত্র না, এই উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ উল্লেখ করে- আচার্যের কাছে লেখা এই খোলা চিঠিতে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, 'বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থী এই উপাচার্যের দায়িত্বে থাকাকালে ক্যাম্পাসে নিরাপদ বোধ করছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববারের হামলার পর সোমবার ক্যাম্পাসে ও মূল ফটকে জলকামান ও রায়ট কারসহ পুলিশের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে ক্যাম্পাসে মোতায়েনরত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বিধান করুন।'
এসময় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষাণা করে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বলা হয়, 'উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদ থেকে হামলার মূল মদদদাতা ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করে তাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।'
শেষে রাষ্ট্রপতির সরাসরি হস্তক্ষেপে শাবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্যের পদত্যাগ নিশ্চিত করে একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার উদ্যোগ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে মহামান্য আচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা আবেদন করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।