সাহানগর ও নৃসিংহপুরে ভাঙনের ভয়াবহতা, উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আমিনুল ইসলাম আপন - জেলা প্রতিনিধি,হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৮ই মার্চ ২০২৫ ০৯:৩০ অপরাহ্ন
সাহানগর ও নৃসিংহপুরে ভাঙনের ভয়াবহতা, উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেওয়ে কুশিয়ারা নদীর কালনী শাখায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এই নদীর তীব্র স্রোত এলাকায় ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সাহানগর ও নৃসিংহপুর গ্রামের কৃষিজমি দ্রুত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর আগেও এলাকার একাধিক গ্রাম এই নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সাহানগর ও নৃসিংহপুর গ্রামগুলোর বাড়িঘর ও কৃষিজমি নদীর গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন গ্রামবাসী।


কুশিয়ারা নদীর কালনী শাখায় গত ৫-৬ বছর ধরে ভাঙন শুরু হলেও সম্প্রতি তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় নদী ভাঙনে কাকাইলছেও, বদরপুর, মনিপুর, সৌলরী, কাদিরপুর, গোসাইপুর, নজরাকান্দা, কন্যাজুরি, উমেদনগর, রুদ্রনগরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকার শত শত পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়ে একর পর এক কৃষিজমি ও রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামো নদী গর্ভে চলে যায়। বর্তমানে সাহানগর ও নৃসিংহপুর গ্রামগুলোর অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠেছে।


এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড একাধিকবার পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে, কিন্তু তার পরেও ভাঙনের গতি কমছে না। বিশেষত কাকাইলছেও চৌধুরীবাজারের কাছে নদী তীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ব্লক স্থাপন করা হলেও ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এর ফলে এলাকাবাসী দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, কারণ তারা জানে যে, দ্রুত এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে তাদের বাড়িঘর ও কৃষিজমি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।


গত কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে কিছুটা পুনর্বাসিত হয়েছে। যেমন, বদরপুর গ্রামের বাসিন্দারা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত জমি পুনরায় নিজের মালিকানায় নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছে। কিন্তু ভাঙনের অব্যাহত তীব্রতা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রায় এক বছর পর মনিপুর ও সৌলরী গ্রামেও ভাঙন শুরু হয়, যার ফলে আরও অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিজের জমিতে পুনর্বাসিত হয়েছে। তবে, এই তীব্র ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে এখনও পর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা চরম বিপদের মধ্যে রয়েছেন।


বর্তমানে সাহানগর ও নৃসিংহপুর গ্রামগুলোর কৃষিজমির প্রায় ১৫ ফুট ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং এতে অনেকের আবাদী জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এলাকার মানুষের জন্য এই ভাঙন রোধ করতে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। গ্রামবাসী বলেন, "যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের বাড়িঘর, জমি, সবকিছু নদীর গর্ভে চলে যাবে।"


এছাড়া, এলাকার জনগণের মধ্যে দ্রুত পুনর্বাসন ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিক আবেদন জানানো হয়েছে। আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক এই ভাঙন এলাকার পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।