অনলাইন ক্লাসে আগ্রহী নয় শিক্ষার্থীরা !

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:০৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ক্লাসে আগ্রহী নয় শিক্ষার্থীরা !

অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কমছে উপস্থিতির হারও। টিকা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাসে আগ্রহী। গবেষকদের পরামর্শ, করোনা সংক্রমণ কম এলাকার স্কুলগুলোতে সশরীরে ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলছে, পর্যটন কেন্দ্র, মেলা ও মার্কেট খোলা রেখে শুধু ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে না।


রাজধানীর ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ। অনলাইন ক্লাসে মন বসাতে না পেরে এসেছেন বন্ধ থাকা স্কুলে।


সে বলছে, অনলাইন ক্লাসে সবকিছু জিজ্ঞাস করা যায় না। জুমে ক্লাস হলে সেটা বলে দিলে পরে আবার রিকভার করা যায় না। এ ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা যায় না। পড়া নিয়ে নানা বিষয় শেয়ার করতে পারি না। আর ঘরে বসে পড়া তেমন হয়ও না। স্কুলে পড়ার যেমন পরিবেশ থাকে, ঘরে তেমন থাকে না। আমার দুই ডোজ টিকা নেওয়া হয়েছে। আমার ক্লাসের সবারই দুই ডোজ নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর টিকা নেওয়াই সম্পন্ন হয়েছে। তাই টিকা নেওয়ার পর স্কুল খুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করি। সব কিছুই তো খোলা আছে। শুধু স্কুলটাই বন্ধ রেখেছে।    


শুধু রায়হানই নয়, টিকা গ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে ক্লাসে আগ্রহী।


তারা বলছে, অনলাইন ক্লাসে চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও থাকা যায় না। অনেক সময়ই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় ওয়াইফাই বা ইন্টারনেট চলে যায় বা বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ক্লাস করার সময় গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় মিসিং হয়ে যায়, তখন জিজ্ঞাসা করতে পারি না। এ রকম আরও অনেক সমস্যা হচ্ছে। স্কুল ছাড়া সব কিছুই খোলা। আমরা তো সব জায়গাতেই যেতে পারছি। তাই যারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে, তারা মনে হয় স্কুলে আসলে ভালো হয়।


শিক্ষকরা বলছেন, অনলাইন ক্লাসে ক্রমেই কমছে উপস্থিতি। মনোযোগও হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।


উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে খুব আগ্রহী ছিল। কিন্তু হঠাৎ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা মুষড়ে পড়েছে। পড়া জিজ্ঞাস কররে উত্তর দেয় না। কারণ অনেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সেখান থেকে তারা চলে যায়। এ ছাড়া অনলাইনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও খুব কমে গেছে।


ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তার বলেন, একটা গ্রুপ ক্লাস মিস করে। একটা অংশ ক্লাসের বাইরে চলে যায়। তারা অনলাইনে যুক্ত হয় না। তারা নানা ধরনের সমস্যার কথা বলে। এ সমস্যাগুলো বিবেচনায় রেখে, পুরোপুরি অনলাইন ক্লাসে সফল না। এটি অনেক অভিভাবকই চান না।


শিক্ষা ম্যাপ তৈরি করে যেসব এলাকায় সংক্রমণ কম সেখানে স্কুল খোলা রাখার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, সারা দেশে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি আছে। একেক জায়গার পরিবেশ একেক রকম। সে পরিস্থিতি বিবেচনায় একাধারে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ক্ষতির কারণ। এখানে সুকৌশলে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। যেসব এলাকায় কম আক্রান্ত, সেগুলো শনাক্ত করা এবং সেই এলাকার বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখা। বিশেষ করে গ্রামে করোনার প্রকোপ খুবই কম। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায়, সেখানকার স্কুলগুলো খোলা রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।  


করোনা প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলছেন, ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণ হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সংক্রমন কম এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যেতে পারে।


তিনি বলেন, যেসব জায়গায় সংক্রমণের শতাংশ কম, সেখানে আলাদা ব্যবস্থাপনা করে স্কুল খোলা রাখাটা একটা ভালো প্রস্তাব। কম বয়সীদের ইমফেকশন কম, মৃত্যুহারও কম। তো সেটাও একটা সুবিধা। তাই বাচ্চাদের নিয়ে সবার যে দুশ্চিন্তা, সবাই মিলে সহযোগিতা করলে সে সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।


তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, করোনার সংক্রমণ কমলেই খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর স্কুল খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।