তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনেকে বলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে নেই। আসলে আমরা উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো পাঠদান, জ্ঞান বিতরণ, সৃজন ও গবেষণায় পিছিয়ে নেই। বরং আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং যারা করে, তাদের সাথে যোগাযোগ না হওয়ার কারণে আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে আসতে পারিনি।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬তম জন্মদিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবয়ব ও উন্নত অবকাঠামো বড় পরিচয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবকাঠামোগত দিকে থেকে অনেক অনুন্নত বিশ্ববিদ্যালয় আছে কিন্তু এসব ছোট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা প্রতিবছরই নোবেল পুরস্কার পাচ্ছে।
গবেষণার প্রতি জোর দিয়ে হাসান মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের সাথে গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই গবেষণাখাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার। এতে শিক্ষকরা গবেষণালব্ধ জ্ঞান আরও কাজে লাগাতে উদ্ধুদ্ধ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য নয় এমন বিষয় তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হবে, পাঠদান হবে, গবেষণা হবে, হবে সাংস্কৃতি-রাজনীতি ও মুক্তিবুদ্ধির চর্চা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের উদ্যেগ নেবে। এভাবে তাদের মেধা ও মনন শাণিত হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার একটি জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক বহুমাত্রিক সমাজ ছাড়া গণতন্ত্র সুসংগঠিত হয় না, দেশ এগিয়ে যায় না। যেখানে মুক্তমতের চর্চা হয় না, সেখানে সমাজ আগায় না। অনেক দেশে মুক্তমতের দমন করা হয়। আমরা চাই একটি বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রেখে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আলোকিত করবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সে কাজ করার সুযোগ বেশি।
তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বেদখল পাহাড় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে আবেদন করে তা চেয়ে নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগকে দায়িত্ব দিয়ে সেখানে বিপন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো যেতে পারে। এইভাবে এই ক্যাম্পাসের সবুজ ধরে রাখা যাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬তম জন্মদিন। আমি বিদেশ থেকে এসে অফিস, সংসদে না গিয়ে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার আবেগ ও ভালোবাসা গভীর। এই বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে আছে অনেক স্বপ্ন ও স্মৃতি। অমার অনেক বন্ধু এখন আর বেঁচে নেই। অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
তিনি বলেন, আমার মনে পড়ে যখন ১৯৭৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন এই ক্যাম্পাসে। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম না, তবে ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন এই ক্যাম্পাসে একটি অপশক্তির প্রভাব ছিল। ১৯৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর চাকসু ভবনের সামনে থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা। চট্টগ্রাম শহরে কুৎসা রটনা করা হয় আমাকে হত্যা করা হয়েছে। বার বার নির্যতনের শিকার হতে হয়েছে রাজনীতির মাঠে। এখনো শরীরে সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি।
এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিন উপলক্ষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এক আনন্দ র্যালি বের হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করে। পরে এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় কেক কেটা হয়।
এসময় চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় 'বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যার ভাবনা' শীর্ষক প্রবন্ধ উত্থাপন করেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ড. মুহিবুল আজীজ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান, চবির সাবেক উপাচার্য ড. বদিউল আলম, অধ্যাপক ড. আনোয়ারুজ্জামান আরিফ, চাকসু ভিপি সাবেক মাজহারুল হক শাহ, বর্তমান ভিপি নাজিম উদ্দিন, চবির এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহাবুব আলম (অনলাইন)।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।