গাজা-ইউক্রেন যুদ্ধ: ২০২৪-এ অস্ত্র বিক্রি করে লালে লাল যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
গাজা-ইউক্রেন যুদ্ধ: ২০২৪-এ অস্ত্র বিক্রি করে লালে লাল যুক্তরাষ্ট্র

বিদায়ী ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে রেকর্ড গড়েছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই আয়ের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে শনিবার এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।  


মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বরাতে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৮০ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতায় বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারের সরঞ্জাম। এসব বিক্রির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইসরায়েলের কাছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের এফ-১৫ যুদ্ধবিমান এবং রোমানিয়ার কাছে ২৫০ কোটি ডলারের ট্যাংক।  


মার্কিন অস্ত্র বিক্রিকে পররাষ্ট্র নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, এটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব অস্ত্র সরবরাহ অনেক সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  


বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের গাজায় চালানো হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।  


এদিকে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে চাপ উপেক্ষা করে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিলেন। মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বাইডেন প্রশাসনকেও এই ধ্বংসযজ্ঞের অর্থায়নের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।  


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর পাশাপাশি নিজস্ব মজুত বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রও উদ্যোগী হয়েছে। এর ফলে মার্কিন অস্ত্র নির্মাতারা আর্টিলারি, ক্ষেপণাস্ত্র, এবং সাঁজোয়া যানসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।  


বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালে অনুমোদিত চুক্তিগুলোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতারা বিশাল পরিমাণ অর্ডার পেয়েছে। ফলে সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদন ও সরবরাহ আরও বাড়ানোর চাপের মুখে রয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্প।  


বিশ্বব্যাপী এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আয় বাড়লেও মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে অস্ত্র সরবরাহের প্রভাব বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।