২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের যোদ্ধাদের হাতে বন্দি হওয়ার পর ২০ বছর বয়সি ইসরাইলি তরুণী কারিনা আরিয়েভ মুক্তি পেলেন গাজার জিম্মিদশা থেকে। এই মুক্তি ঘটেছে এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায়, যার মধ্যে কারিনার পাশাপাশি আরও তিনজন তরুণীও মুক্তি পেয়েছেন। এই ঘটনার পর ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে শান্তি আলোচনার নতুন এক পর্যায় শুরু হয়েছে।
কারিনা আরিয়েভ, যিনি জন্মসূত্রে জেরুজালেমের বাসিন্দা, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে অপহৃত হন। তিনি তখন ইসরাইলের একটি স্কুলে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষিকার কাজ করছিলেন। তার অপহরণের পর তার পরিবারের সদস্যরা উৎকণ্ঠায় ছিলেন, কারণ তারা জানতেন না তার অবস্থা কী হবে। এই ঘটনার প্রায় দু’মাস পর, হামাস একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে যেখানে কারিনা এবং অন্যান্য বন্দিরা জীবিত ছিলেন, যার ফলে তার পরিবার কিছুটা আশ্বস্ত হয়।
কারিনা একটি অত্যন্ত প্রতিভাবান তরুণী, যিনি বংশীবাদক এবং চারটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। তার পরিবার জানিয়েছে যে তিনি যেকোনো ধাঁধা সমাধানে দক্ষ এবং জটিল সমস্যাগুলোর বিশ্লেষণ করতে পারেন খুব সহজে। তার পরিবার আরও জানিয়েছে যে তিনি শিশুদের ভালোবাসতেন, এবং এজন্য কিন্ডারগার্টেন স্কুলে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছিলেন।
গাজার জিম্মিদশায় থাকার সময় কারিনা এবং অন্যান্য বন্দির পরিবার তাদের প্রতি অত্যাচার এবং শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। তবে, সম্প্রতি ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর, কারিনা আরিয়েভসহ অন্যান্য বন্দিদের মুক্তির সুযোগ তৈরি হয়।
তবে কারিনার মুক্তি শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, বরং ইসরাইলের নাগরিকদের জন্যও একটি বিশাল সান্ত্বনার বিষয়। এই ঘটনাটি দেশটির জনগণের মধ্যে এক ধরনের আশার আলো সৃষ্টি করেছে এবং তারা আশা করছে যে ভবিষ্যতে আরও অনেক বন্দি মুক্তি পাবে।
এছাড়া, কারিনার পরিবারের সদস্যরা তার মুক্তির খবর শুনে অত্যন্ত খুশি, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে তার অস্বস্তি এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। কারিনা মুক্তি পাওয়ার পর, তার পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা তাদের প্রিয়জনকে ফিরে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। তারা বলেন, কারিনার মধ্যে এক ধরনের অদম্য শক্তি ছিল যা তাকে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সহায়তা করেছে।
এছাড়াও, কারিনার মুক্তি ইসরাইলি সরকারের জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, কারণ এটি দেশের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সঙ্কটটি ইসরাইলের জন্য এক দীর্ঘ ও কঠিন সময় ছিল, তবে কারিনার মুক্তি ইসরাইলিদের জন্য একটি বড় সুখবর।
এদিকে, কারিনা আরিয়েভের মুক্তির সাথে আরও চারজন তরুণী মুক্তি পেয়েছেন, তারা হলেন ড্যানিয়েলা গিলবোয়া, নামা লেভি এবং লিরি অ্যালবাগ। এই তরুণীদের মুক্তি পেয়েও তাদের পরিবাররা অত্যন্ত আনন্দিত। পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে তাদের ফিরে আসাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
কারিনা আরিয়েভের মুক্তি শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো ইসরাইলের জন্য একটি আনন্দের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলের নাগরিকরা আশা করছেন যে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘটবে এবং বন্দিরা মুক্তি পাবে। এর মাধ্যমে একটি নতুন শান্তির পথের সূচনা হতে পারে, যা উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
এই মুক্তির ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই মনে করছেন যে এই ধরনের আলোচনাগুলি যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা পুরো অঞ্চলে শান্তির পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য আরও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো জরুরি।
সবশেষে, কারিনা আরিয়েভের মুক্তির ঘটনা ইসরাইলের জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে, এবং এটি এক নতুন আশা সৃষ্টি করেছে। বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া কেবলমাত্র তাদের পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।