সিলেট অঞ্চলের চা বাগানগুলোতে ৩৭ দিন ধরে চলমান কর্মবিরতির কারণে শ্রমিক ও মালিকপক্ষ উভয়ই তীব্র সংকটে পড়েছে। শ্রমিকরা বেতন ও রেশন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, অন্যদিকে চায়ের উৎপাদন বন্ধ হয়ে মালিকপক্ষও বড় ধরনের লোকসানের মুখে।
মৌলভীবাজারের লস্করপুর ভ্যালির ৪টি চা বাগানসহ ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) অধীনস্থ ১২টি বাগানে এই অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ২২ আগস্ট থেকে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি ও রেশন বন্ধ থাকায় অক্টোবর মাসে তারা কর্মবিরতিতে যান। এতে ১০ লাখ কেজি তৈরি চা পাতা মজুত থাকা অবস্থায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন গাছের কুঁড়ি ও কচি পাতা পচে নষ্ট হওয়ায় আগামী মৌসুমেও উৎপাদন সংকটে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, এনটিসি চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের পদত্যাগের পর থেকে ব্যাংক ঋণ আটকে যায়। এতে মজুরি ও রেশন বন্ধ হয়ে মালিকপক্ষ আর্থিক সংকটে পড়ে। চন্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিক রেনু খা বাউরি বলেন, "মজুরি না পেয়ে সন্তানদের খাওয়া ও চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।" একই অবস্থা রিতা গঞ্জুর ও দুলন রিকি হাসনের মতো হাজারো শ্রমিকের।
চা শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার জানান, "কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে কর্মবিরতিতে গেছে।" চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিমুর রহমান জানান, "পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে চলতি মৌসুমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
এনটিসি সূত্র জানায়, চা উৎপাদনে ধস নামার কারণে ইতিমধ্যে ১০-১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হলেও চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রমিকদের দ্রুত পাওনা পরিশোধ করে বাগানের উৎপাদন চালু না করলে এই সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।