পবিত্র ঈদুল আজহার প্রথম দিনে সাড়ে তিন লাখ কাঁচা চামড়া সরাসরি সংগ্রহ করেছেন ট্যানারি মালিকরা। পুরান ঢাকার কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত পোস্তায় এক লাখের মতো চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সব মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ জুন) আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, এবার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া সব মিলিয়ে এক কোটি পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। ঈদের প্রথম দিন ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলের কাঁচা চামড়া সরাসরি সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ হবে।
ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, কোরবানির চামড়ার বড় অংশই সংরক্ষণ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। পাশাপাশি ট্যানারি মালিকরা সরাসরি কিছুসংখ্যক কাঁচা চামড়া কেনেন। ঈদের দিন থেকে আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। আজকেও কিছু সংগ্রহ করা হবে।
তিনি বলেন, এবার আমাদের লক্ষ্য গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া সব মিলিয়ে এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহ করব। ট্যানারিগুলো সাধারণত লবণযুক্ত চামড়া বেশি কিনে থাকে। মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের এক দুই সপ্তাহ পর থেকে লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ শুরু হবে। এবার সার্বিক দিক বিবেচনায় চামড়ার বাজার ভালো ছিল।
পুরান ঢাকার পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিনস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. টিপু সুলতান বলেন, এবার প্রথম দিন এক লাখ পিস গরুর চামড়া সংগ্রহের টার্গেট করেছিলাম। মোটামুটি সংগ্রহ হয়েছে। আজ ও আগামীকালও সংগ্রহ হবে।
আড়তদারদের এ নেতা বলেন, এবার বাজারে তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা ছিল না। সবাই সঠিক দামেই কেনাবেচা করেছে। তবে ট্যানারি মালিকরা যদি আড়তদারদের পাওনা অর্থ দিয়ে দিতেন তাহলে বেশি চামড়া সংগ্রহ করতে পারতাম।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তায় ছোট আকারের গরুর চামড়া ৪০০–৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের গরুর চামড়া মানভেদে ৬০০–৮০০ টাকা আর বড় আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮০০–১২০০ টাকায়। তবে অধিকাংশ আড়তদার ছোট আকারের গরুর চামড়া এবং খাসি ও বকরির চামড়া কিনতে অনীহা দেখান। রাতে ছোট আকারের গরুর চামড়া কেউ বিক্রি করতে আনলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকাও কেনাবেচা হয়েছে।
এর আগে গত ২৫ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যানারি মালিক, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় ৩ টাকা, বাইরে ৫ টাকা বাড়িয়ে গরুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা, ঢাকার বাইরে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খাসি ও বকরির চামড়ার দাম গতবারের মতো রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এর আগের বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ছিল ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা বর্গফুট।
ত্যাগের মহিমায় সারা দেশে বৃহস্পতিবার পালিত হয় মুসলমানদের অন্যতম বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন। সারাদেশে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও চলছে পশু কোরবানি। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আজহা।
সারাবিশ্বের মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিমের (আ.) পুত্রকে কোরবানির প্রতীকী ত্যাগের ঐতিহ্য অনুসরণে ১০ জিলহজ পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। ইসলামের বিধান অনুযায়ী ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ তিনদিন কোরবানি দেওয়া যায়। সেই হিসাবে এবার ২৯, ৩০ ও ১ জুলাই কোরবানি দিতে পারবে। সারাদেশে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও পশু কোরবানি হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।