দক্ষিণাঞ্চলে শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটার কার্যক্রম। অনেক কৃষকের গোলাতেও বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। গ্রামীণ জনপদের বেশিরভাগ জায়গাতেই কৃষক-কৃষাণীরা সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকা ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই, সিদ্ধ ও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়-কুটো শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এরমধ্যে অনেকে সনাতন পদ্বতিতে গবাদিপশু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হারভেস্টারসহ বিভিন্ন মেশিন দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা।
বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে ধানে চিটা রয়েছে জানিয়ে কৃষকরা জানান, এবছরও ফলন ভালো হলেও রয়েছে। আর বাগেরহাট, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীসহ দূরবর্তী জেলা থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিকরা বলছেন, দেশি প্রজাতির ধানের থেকে এবছর হাইব্রিড ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
গৌরনদীর কৃষক বাচ্চু মির জানান, বৃষ্টি বন্যার আভাস পেয়েছেন বলে তার আগেই ধান ঘরে তুলতে হবে। এজন্য কিছু জমির ধান এখনো পরিপক্ক না হলেও কাটতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তিনি আরো জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ধানে চিটা রয়েছে। তবে ফলন আশানরূপ হওয়ায় তিনি খুশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বরিশাল জেলার মধ্যে আগৈলঝাড়া, গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলায় ফলনও ভালো হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর ভালো ফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মামুনুর রহমান। তিনি জানান, এবছর গৌরনদী উপজেলার ছয় হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
আর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বরিশাল জেলায় ৫২ হাজার ৮শত ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ হাজার ১৪২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ২৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে উফসি ও দুই হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলার উপ-পরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত জানান জানান, গত বছর কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্যে পাওয়ায় এবছর অনাবাদি বহু জমি বোরো চাষের আওতায় এসেছে। ফলে জেলায় বোরোর কাঙ্খিত লক্ষামাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি বোরো মৌসুমে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলা থেকে ৪৩ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন বোরো ধান এবং চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
এর মধ্যে ২৪ হাজার ৯৯ মেট্রিক টন ধান ও ১৯ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন চাল রয়েছে। যারমধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা দরে প্রতি কেজি ধান এবং ৪০ টাকা দরে মিলারদের কাছ থেকে সিদ্ধ চাল কিনে সংগ্রহ করবে সরকার।
বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,বরিশাল জেলা থেকে ৮ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন ধান ও ৫ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন চাল ,ঝালকাঠিতে ১ হাজার ২২ মেট্রিক টন ধান ও ১ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন চাল, পিরোজপুরে ৪ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন ধান ও ৩ হাজার ৩৩২মেট্রিক টন চাল,
ভোলায় ৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন ধান ও ৪ হাজার ৭১৪ মেট্রিক টন চাল,পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩৯২ মেট্রিক টন ধান ও ৪ হাজার ২৪ মেট্রিক টন চাল ও বরগুনায় ৭১৭ মেট্রিক টন ধান ও ৯৭৪ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হয়।
বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৪০ টাকা দরে প্রতিকেজি চাল চলতি মাসের ৭ মে থেকে শুরু করে আগামী ১৬ আগস্ট এবং গত ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ২৭ টাকা দরে প্রতিকেজি বোরো-২১ নম্বর ধান আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত কিনে সংগ্রহ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।